পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার রাজনীতিতে গত শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে এক চমকপ্রদ মোড় নেয়। আলোচিত-সমালোচিত ছাত্রলীগ নেতা মো. নাঈম হাসান, যিনি এলাকায় ‘টয়লেট নাঈম’ নামে পরিচিত, তাকে লেবুখালি পায়রা সেতুর সংলগ্ন এলাকা থেকে ছাত্রদলের কর্মীরা ধাওয়া করে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, নাঈমকে ঐ এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হলে স্থানীয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন। এই সময় উপস্থিত ছিলেন দুমকি উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সুমন শরীফ এবং স্থানীয় অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। পরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে তাকে সেখান থেকেই পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়।
নাঈম পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)-এর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি দুমকি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হারুন অর রশিদের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবেও কাজ করতেন। তার বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়মের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নাঈম কেবল রাজনৈতিক পরিচয়ের সুযোগ নিয়ে নয়, সরাসরি সাধারণ জনগণের অধিকারও হরণ করেছেন। একজন স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“টয়লেট, টিউবওয়েল—কোনো কিছুর টাকাই ছাড়েনি সে। লজ্জায় মাথা কাটা যায় আমাদের! এর বিচার না হলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস আর কোথায় থাকবে?”
বিশ্ববিদ্যালয়সূত্রে জানা গেছে, নাঈম ডিনের জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে সরকারি অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করেছিলেন। এ বিষয়ে প্রশাসনিক তদন্ত চলছে এবং তার নামে বেশ কয়েকটি অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রদলের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়,
“দুমকি উপজেলাকে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ দুর্নীতিবাজরা ‘লুটের এলাকা’ বানিয়ে ফেলেছে। ‘টয়লেট নাঈম’ তারই এক প্রতিচ্ছবি। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি—কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”
এ ঘটনায় স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থেকে যারা বছরের পর বছর দুর্নীতি চালিয়ে গেছে, তাদের ধরার শুরু হলো এখন।
দুমকি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাংবাদিকদের জানান,
“আটক ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে, অনেক সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থী এই ঘটনাকে একটি ‘জনতার ন্যায়বিচারের মুহূর্ত’ হিসেবে দেখছেন। তাঁরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে কেউ আর নিরাপদ নয়—জনগণ জেগে উঠেছে।
পটুয়াখালীর এই ঘটনা কেবল একটি গ্রেপ্তারের চেয়ে অনেক বেশি কিছু। এটি একটি বার্তা—দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুরু হয়েছে। ‘টয়লেট নাঈম’-এর মতো চরিত্রদের বিরুদ্ধে জনতার সোচ্চার ভূমিকা ভবিষ্যতের জন্য একটি সাহসী উদাহরণ হয়ে থাকবে।