ড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাটে দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে আসছিলেন হাট ইজারাদার ফরিদুল হক শাহীন শিকদার। তিনি শুধু একজন ইজারাদার নন, বরং তিনি বিএনপির ভূরুঙ্গামারী উপজেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং তিলাই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবেও পরিচিত।
শনিবার (৩১ মে) দুপুরে কুড়িগ্রাম আর্মি ক্যাম্পের একটি নিয়মিত টহল দল ভূরুঙ্গামারী হাটে গরু ও ছাগলের কেনাবেচার পরিস্থিতি পরিদর্শনে যায়। সেই সময় হাটে উপস্থিত জনসাধারণ সেনা সদস্যদের কাছে অভিযোগ করেন যে, হাটে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে অনেক বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর কড়া পর্যবেক্ষণেই বেরিয়ে আসে আসল চিত্র
অভিযোগ পেয়ে সেনা সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে হাসিল আদায়ের রসিদ যাচাই করে এবং হাটে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণেই বেরিয়ে আসে ভয়াবহ তথ্য—সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে দ্বিগুণ বা তারও বেশি অর্থ আদায় করা হচ্ছিল।
টহল দলের কমান্ডার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে হাটের ইজারাদার ফরিদুল হক শাহীন শিকদারকে সেখানেই আটক করেন। পরে তাকে আইনগত হেফাজতে নেওয়া হয়।
হাট ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক প্রভাব ও অপচর্চার স্পষ্ট প্রমাণ
এ ঘটনায় আবারও সামনে এলো রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে কীভাবে স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়। দীর্ঘদিন হাট ইজারার দায়িত্বে থাকা ফরিদুল হক শাহীন শিকদার স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় এবং তার পরিচয়ের প্রভাবে বহু অনিয়ম কার্যত অদৃশ্যই ছিল প্রশাসনের চোখে।
তবে এবার সেনাবাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতিতে সেই অনিয়ম আর চাপা থাকেনি। সেনাবাহিনী স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, সরকারি হারের বাইরে অতিরিক্ত হাসিল আদায় একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং জনস্বার্থের পরিপন্থী। জনমনে ক্ষোভও দীর্ঘদিন ধরে জমে ছিল, যা অবশেষে ফুঁসে উঠেছে।
প্রশাসনের অবস্থান ও মামলার প্রক্রিয়া
ঘটনার বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল হেলাল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, “ঘটনার সত্যতা মিলেছে। উপজেলা পরিষদ বাদী হয়ে আটক ফরিদুল হকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে। আগামীকাল সকালে তাকে কুড়িগ্রাম জেলা আদালতে প্রেরণ করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের অর্থ আদায় শুধু বেআইনি নয়, বরং সাধারণ ব্যবসায়ী এবং কৃষকদের ওপর বোঝা সৃষ্টি করে। এটি প্রতিরোধে প্রশাসন সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া: “এতদিনে সুবিচার দেখছি”
সেনাবাহিনীর এই সরাসরি হস্তক্ষেপকে ভূরুঙ্গামারীর সাধারণ মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। হাটে গরু বিক্রি করতে আসা এক কৃষক বলেন, “আগে আমরা ৫০০ টাকার জায়গায় ১০০০ টাকা পর্যন্ত দিতাম। কেউ কিছু বললে ভয় দেখাত। আজকে সেনাবাহিনী এসে যা করলো, এতদিনে সুবিচার দেখলাম।”
একজন হাট ব্যবসায়ী জানান, “রাজনীতির কারণে এসব লোক বছরের পর বছর এইসব করে, কেউ কিছু বলে না। এখন যদি এমন অভিযান নিয়মিত হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ একটু স্বস্তিতে থাকবে।”
এই ঘটনাটি শুধু একটি হাট ইজারাদারের আটক নয়—এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, যে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা ক্ষমতার ছায়া ব্যবহার করে জনসাধারণের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার দিন শেষ হতে চলেছে।
ভবিষ্যতে এই ধরনের অভিযান আরও চলমান থাকলে স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতি অনেকটাই কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সচেতন মহল।