বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে প্রথমবারের মতো হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। 'সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫'-এর আলোকে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়, যা দেশের বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগের এক নতুন যুগের সূচনা করল।
বুধবার (২৮ মে) সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন কর্তৃক জারি করা এই গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাদেশটির ধারা ৭ অনুযায়ী, সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফরমে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছে।
এই বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, যদিও ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে নোটিশ ও প্রাথমিক আবেদন নেওয়া হয়েছে, তবুও অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং যোগ্য প্রার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়াতে এবার প্রথমবারের মতো গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, আগ্রহী প্রার্থীদের নির্ধারিত ফরমে আবেদনপত্র পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি সংযুক্ত করে আগামী ২২ জুনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে ডাকযোগে অথবা সরাসরি জমা দিতে হবে।
তবে যারা পূর্বে নির্ধারিত ফরমে আবেদন জমা দিয়েছেন, তাদের পুনরায় দরখাস্ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলেও জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ২১ জানুয়ারি সরকার ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জারি করা ওই গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে একটি স্থায়ী নিয়োগ কাউন্সিল গঠনের বিধান রাখা হয়। এ কাউন্সিলের নাম দেওয়া হয় ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’, যা বিচারক নিয়োগের সুপারিশ প্রণয়ন এবং যোগ্যতা নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস পাবে এবং একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দক্ষ বিচার ব্যবস্থা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
নতুন এই ব্যবস্থায় প্রধান বিচারপতিকে সহায়তা করতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল উপযুক্ত প্রার্থীদের বাছাই ও সুপারিশ করবে। এ কাউন্সিল বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও গঠনমূলক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ ধরনের পদক্ষেপ শুধু নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে না, বরং বিচার বিভাগে জনআস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীরা।
এই প্রথমবারের মতো নেওয়া এ ধরনের গণমুখী ও নিয়মতান্ত্রিক উদ্যোগ দেশের বিচার ব্যবস্থায় এক ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।