close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা কেন? নেপথ্যে 'এলিটতন্ত্র' ও 'ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত' গোলাম মাওলা রনির বিশ্লেষণ..

আব্দুল্লাহ আল মামুন avatar   
আব্দুল্লাহ আল মামুন
খুব কৌশলে বা ইন্টেলেকচুয়ালি তারা দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসা শিক্ষা, আলেম সমাজ এবং ইসলামি মূল্যবোধকে তাচ্ছিল্য করে আসছে।..

বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী দুই পত্রিকা প্রথম আলো এবং দ্য ডেইলি স্টারে সাম্প্রতিক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করেছেন রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট গোলাম মাওলা রনি। তিনি এই ঘটনাকে দুই দশকের ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক বিবর্তনের চরম সংঘর্ষ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

প্রভাবশালী কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন? রনি উল্লেখ করেন, ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন এই দুটি পত্রিকা ও তাদের সম্পাদক মতিউর রহমান এবং মাহফুজ আনাম গত দুই দশকে যে প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন করেছেন, তা ব্রিটিশ আমলের আজাদের মাওলানা আকরাম খাঁ বা ইত্তেফাকের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সঙ্গে তুলনীয় হতে পারত। কিন্তু মানিক মিয়া বা আকরাম খাঁ যেখানে সমাজের মুরুব্বি বা বটবৃক্ষ ছিলেন, সেখানে বর্তমান সম্পাদকরা অনেকটা ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন’ বা ধরাছোঁয়ার বাইরের ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। তারা একটি নির্দিষ্ট ‘এলিট বা অভিজাত’ গোষ্ঠী তৈরি করেছেন, যাদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোনো আত্মিক সংযোগ নেই।

রাজনীতিবিদ্বেষ ও বিরাজনীতিকরণ গোলাম মাওলা রনির মতে, ভোরের কাগজ থেকে শুরু করে প্রথম আলো পর্যন্ত এই গোষ্ঠীটি ধারাবাহিকভাবে রাজনীতিবিদদের হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘তারা সমাজে এমন একটি ন্যারেটিভ তৈরি করেছে যে, রাজনীতিবিদরা সব খারাপ আর সুশীল সমাজ বা আমলারা ভালো।’’ তার অভিযোগ, ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আসিফ নজরুল, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বা আদিলুর রহমান শুভ্র আজ যারা দেশ চালাচ্ছেন, তারা মূলত প্রথম আলোরই ‘বাই-প্রোডাক্ট’ বা সৃষ্টি। তিনি মনে করেন, এই বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার কারণেই আজ দেশের পলিটিক্যাল ইনস্টিটিউশনগুলো ধ্বংসের পথে।

ধর্মীয় অনুভূতি ও গণক্ষোভ রনি হামলার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকে। তিনি বলেন, ‘‘খুব কৌশলে বা ইন্টেলেকচুয়ালি তারা দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসা শিক্ষা, আলেম সমাজ এবং ইসলামি মূল্যবোধকে তাচ্ছিল্য করে আসছে। কখনো কোরআন, কখনো নবী বা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে।’’ সাধারণ তৌহিদী জনতার মনে জমে থাকা সেই ক্ষোভই আজ আগ্নেয়গিরির মতো বিস্ফোরিত হয়েছে।

রাষ্ট্রের ব্যর্থতা ও ভবিষ্যৎ শঙ্কা রনি রাষ্ট্রের ভূমিকারও কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল রাষ্ট্রের অবস্থা আজ তেমনই। ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, কিন্তু রাষ্ট্র আজ এতটাই দুর্বল যে তা করতে ব্যর্থ হয়েছে।’’ তিনি সতর্ক করে বলেন, আজ যদি এই হামলা বিচারহীন থাকে, তবে ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা হতে পারে।

উপসংহার গোলাম মাওলা রনি মনে করেন, প্রথম আলো বা ডেইলি স্টারের মতো প্রতিষ্ঠান রাতারাতি গড়ে ওঠে না। দৈনিক আজাদের মতো বা ইত্তেফাকের মতো পরিণতি যেন এদের বরণ করতে না হয়, সেজন্য তাদের ‘রিকনসিলিয়েশন’ বা আত্মসমালোচনা প্রয়োজন। অন্যথায়, তাদের তৈরি করা ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ বা দানবই তাদের চূড়ান্ত পতনের কারণ হতে পারে।

Nessun commento trovato


News Card Generator