অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত নতুন বাজেটকে “নব্য ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন” বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলের নেতা জি এম কাদের।
মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত নিজ কার্যালয়ে বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, “এই বাজেট বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে শুধু ক্ষমতা রক্ষার রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। এটি কোনওভাবেই গণমুখী নয়। বরং এটি জনগণকে আরও নিঃস্ব করে তোলার দিকেই পরিচালিত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “পতিত সরকারের পূর্ববর্তী বাজেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবারের বাজেটে কিছু কাটছাঁট করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই পরিবর্তনগুলো জনগণের বাস্তব জীবনযাত্রায় কোনও স্বস্তি বয়ে আনবে না। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য বাজেটে নেই কোনো প্রণোদনা, নেই সুরাহা।”
বক্তব্যে জি এম কাদের বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা খুবই নাজুক। প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী হওয়ায় কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের মন্দাভাব দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তার ভাষায়, “এ বাজেটে প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতির হার অর্জন মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনমান আরও অবনতি ঘটবে। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে।”
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতি ইঙ্গিত করে জি এম কাদের বলেন, “বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। সেই তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। ফলে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো আজ খাদ্যসংকটে পড়েছে। অনাহার ও অর্ধাহারে দিন কাটানো মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।”
তিনি বলেন, “বাজেট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা বা রূপরেখা কোথাও নেই। শুধুমাত্র কাগজে-কলমে কিছু সংখ্যার খেলা দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে জনগণের চোখে ধুলা দেয়া হচ্ছে।”
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “এই বাজেট পুরোপুরি জনবিচ্ছিন্ন, গণবিরোধী ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার মতো একটি নকশা। এতে সাধারণ মানুষের আস্থার পুনঃস্থাপন হবে না। বরং আরও অবিশ্বাস ও হতাশা সৃষ্টি হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান সরকারের প্রকৃত জনসমর্থন নেই বলেই তারা বাজেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সাফল্যের গল্প সাজাচ্ছে। এতে বাস্তবতা আড়াল করা যাবে না।”
জি এম কাদেরের মতে, প্রস্তাবিত বাজেট শুধুমাত্র একটি আর্থিক পরিকল্পনা নয়; এটি একটি রাজনৈতিক বার্তা বহন করে, যা গণতন্ত্র নয় বরং শাসনব্যবস্থার একনায়কতান্ত্রিক রূপকে প্রতিফলিত করে। তিনি বলেন, “এই বাজেট সাধারণ মানুষ নয়, সুবিধাভোগীদের জন্য তৈরি। এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে আরও দুর্বল করবে।”