বিশ্ব রাজনীতির উত্তাপ নতুন মোড় নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গোপন ও ধ্বংসাত্মক সামরিক প্রযুক্তি—বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমানগুলো বর্তমানে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এদের বহন করা ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা এতটাই শক্তিশালী যে, ইরানের পাহাড় ও মাটির নিচে স্থাপিত পারমাণবিক ঘাঁটিগুলোকেও ধ্বংস করে দিতে পারে।
২১ জুন শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিমান ট্রাফিক তথ্য এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইটের সূত্রে এই খবর নিশ্চিত করেছে মার্কিন পত্রিকা দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। তারা জানিয়েছে, মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের হুইটম্যান বিমান ঘাঁটি থেকে একাধিক বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান প্রশান্ত মহাসাগরের আকাশে উড়াল দিয়েছে। বিমানগুলোর চূড়ান্ত গন্তব্য যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ফ্লাইট ট্র্যাকার দাবি করছে—এগুলো গুয়ামে অথবা ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়ায় অবস্থান নিতে পারে।
বিভিন্ন বিশ্লেষক মনে করছেন, দিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটিতে এই বিমান মোতায়েনের অর্থ হলো, সেখান থেকে খুব সহজেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানা সম্ভব। বিশেষ করে ফর্দোর মতো ভূগর্ভস্থ ঘাঁটিতে, যেখানে ইরান তার সবচেয়ে গোপন ও সংরক্ষিত পারমাণবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
বি-২ বোমারু বিমানগুলো ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের বিশেষ বোমা বহনে সক্ষম, যেগুলো 'Massive Ordnance Penetrator' নামে পরিচিত। এসব বোমা কংক্রিট ও ইস্পাতের বহু স্তর ভেদ করে গভীরে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের অস্ত্রই একমাত্র উপায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার।
তবে এই বিমান চলাচলের পেছনে আসল উদ্দেশ্য এখনো অস্পষ্ট। কেউ কেউ বলছেন, এটা সরাসরি সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নয় বরং ইরানের ওপর কূটনৈতিক চাপ তৈরির অংশ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র হয়তো দেখাতে চাচ্ছে, তারা প্রস্তুত—যদি তেহরান পারমাণবিক কার্যক্রম বন্ধ না করে।
প্রসঙ্গত, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগেই ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছিলেন। যদিও তিনি পরে এই বিষয়ে ধোঁয়াশা রেখে বলেন, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
বিশ্বের দৃষ্টি এখন ওয়াশিংটন-তেহরান সম্পর্কের ওপর। এই সময়টা কেবল রাজনীতি নয়, ভূরাজনৈতিকভাবে পরবর্তী দশকের গতিপথ নির্ধারণ করে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বিমানের গতিপথ কী কেবল মহড়া, নাকি যুদ্ধের আগাম ঘোষণা—তা জানতে বাকি বিশ্ব তাকিয়ে আছে হুশিয়ারি ও প্রত্যুত্তরের সম্ভাব্য চরম ধাপে।
এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি সামরিক পদক্ষেপ পর্যালোচনা করছে ইরানসহ বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো। কারণ, একটিমাত্র অর্ডার বদলে দিতে পারে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত চিত্র। আর যদি ইরানের ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারই হয় লক্ষ্য, তবে শুরু হতে পারে আরেকটি বিধ্বংসী অধ্যায়।