শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) বেগম সৈয়দুন্নেছা হলে চাঞ্চল্যকর এক ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে। অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেত্রী তাহসিন আক্তার মুন দুই ছাত্রীকে দলীয় প্রোগ্রামে অংশ না নেওয়ায় হলের রুম ছেড়ে দিতে হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে স্ক্রিনশট, যা ব্যাপক আলোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে শিক্ষার্থী মহলে।
ঘটনার শিকার দুই শিক্ষার্থী হলেন ১৬-১৭ সেশনের রূপা রহমান এবং ২২-২৩ সেশনের উম্মে সুমাইয়া সুপ্তি। অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১ মে থেকে তাহসিন মুন নিয়মিত তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছিলেন যাতে তারা ছাত্রদলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। প্রোগ্রামে যেতে রাজি না হওয়ায়, তাদেরকে হল রুম ছাড়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়।
হল ছাড়ার হুমকি ও ভয়ভীতির অভিযোগ
ভুক্তভোগী ছাত্রী রূপা রহমান জানান,
“তাহসিন আপু বলতেন, ‘ক্লাস করা লাগবে না, প্রোগ্রামে চল। স্যার ক্লাসে প্রেজেন্ট দিয়ে দিবেন।’ তিনি আরও বলতেন, আমাদের রুম অন্যদের নামে বরাদ্দ হয়ে গেছে। ১৫ তারিখের আগেই রুম ছেড়ে দিতে হবে।”
রূপার বক্তব্য অনুযায়ী, ছাত্রদলের কর্মসূচিতে না গেলে তাদের উপর বাড়ানো হয় মানসিক চাপ। এমনকি পরীক্ষার আগের দিনও সেই কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়।
একই কক্ষে থাকা উম্মে সুমাইয়া সুপ্তি বলেন,
“আমি না গেলে আমাকে ‘বেয়াদব’ আখ্যা দেওয়া হয়। সিনিয়রদের মাধ্যমে বারবার চাপ আসে। মনে হচ্ছে ছাত্রলীগের আগের যুগ ফিরে এসেছে — তাদের যেভাবে প্রোগ্রামে যেতে বাধ্য করা হতো, এখন ছাত্রদলের মধ্যেও সেই প্রবণতা দেখা দিচ্ছে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল স্ক্রিনশট
এই ঘটনার প্রমাণ হিসেবে রূপা ও সুপ্তি যে কথোপকথনের স্ক্রিনশট দিয়েছেন, তা ইতোমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশ না নেওয়ার কারণে হল রুম ছাড়ার হুমকি কতটা ন্যায্য?
তাহসিন আক্তার মুনের বক্তব্য
অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তাহসিন মুন কিছুটা দায় স্বীকার করে বলেন,
“৩১৪ নম্বর রুমে রূপা ও সুপ্তিকে অন্য রুমে যেতে বলেছি। কারণ সেই রুমে দুজন ১৭ ব্যাচের ছাত্রলীগ কর্মী ছিল, এবং প্রভোস্ট ম্যাডাম বলেছিলেন যে রুমগুলো ফ্যাকাল্টির টপ স্টুডেন্টদের দেওয়া হবে। আমি ভুল করেছি — ম্যাডামের অনুমতি ছাড়া তাদের রুম ছাড়ার কথা বলা ঠিক হয়নি। এজন্য আমি দুঃখিত।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
বেগম সৈয়দুন্নেছা হলের প্রভোস্ট বর্তমানে দেশের বাইরে থাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় নেতার প্রতিক্রিয়া
শেকৃবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন,
“ছাত্রদলের কোনো নীতিতে জোর করে কাউকে কর্মসূচিতে নেওয়ার নির্দেশনা নেই। এটি সম্পূর্ণ তাহসিন মুনের ব্যক্তিগত কাজ। ছাত্রদল এমন আচরণ সমর্থন করে না।”
তিনি আরও বলেন,
“কেউ ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও তাকে নিজ দায়িত্বে হল ছাড়তে হবে। কেউ যদি নৈরাজ্য করে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশ্লেষণ: ছাত্র রাজনীতির নামে ভয়ের সংস্কৃতি?
এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তোলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতির প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের উপর চাপ প্রয়োগ কতটা যৌক্তিক? একটি গণতান্ত্রিক সমাজে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিজস্ব মতামত ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে এবং শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) বেগম সৈয়দুন্নেছা হলে চাঞ্চল্যকর এক ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে। অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেত্রী তাহসিন আক্তার মুন দুই ছাত্রীকে দলীয় প্রোগ্রামে অংশ না নেওয়ায় হলের রুম ছেড়ে দিতে হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে স্ক্রিনশট, যা ব্যাপক আলোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে শিক্ষার্থী মহলে।
ঘটনার শিকার দুই শিক্ষার্থী হলেন ১৬-১৭ সেশনের রূপা রহমান এবং ২২-২৩ সেশনের উম্মে সুমাইয়া সুপ্তি। অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১ মে থেকে তাহসিন মুন নিয়মিত তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছিলেন যাতে তারা ছাত্রদলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। প্রোগ্রামে যেতে রাজি না হওয়ায়, তাদেরকে হল রুম ছাড়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়।
হল ছাড়ার হুমকি ও ভয়ভীতির অভিযোগ
ভুক্তভোগী ছাত্রী রূপা রহমান জানান,
“তাহসিন আপু বলতেন, ‘ক্লাস করা লাগবে না, প্রোগ্রামে চল। স্যার ক্লাসে প্রেজেন্ট দিয়ে দিবেন।’ তিনি আরও বলতেন, আমাদের রুম অন্যদের নামে বরাদ্দ হয়ে গেছে। ১৫ তারিখের আগেই রুম ছেড়ে দিতে হবে।”
রূপার বক্তব্য অনুযায়ী, ছাত্রদলের কর্মসূচিতে না গেলে তাদের উপর বাড়ানো হয় মানসিক চাপ। এমনকি পরীক্ষার আগের দিনও সেই কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়।
একই কক্ষে থাকা উম্মে সুমাইয়া সুপ্তি বলেন,
“আমি না গেলে আমাকে ‘বেয়াদব’ আখ্যা দেওয়া হয়। সিনিয়রদের মাধ্যমে বারবার চাপ আসে। মনে হচ্ছে ছাত্রলীগের আগের যুগ ফিরে এসেছে — তাদের যেভাবে প্রোগ্রামে যেতে বাধ্য করা হতো, এখন ছাত্রদলের মধ্যেও সেই প্রবণতা দেখা দিচ্ছে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল স্ক্রিনশট
এই ঘটনার প্রমাণ হিসেবে রূপা ও সুপ্তি যে কথোপকথনের স্ক্রিনশট দিয়েছেন, তা ইতোমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশ না নেওয়ার কারণে হল রুম ছাড়ার হুমকি কতটা ন্যায্য?
তাহসিন আক্তার মুনের বক্তব্য
অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তাহসিন মুন কিছুটা দায় স্বীকার করে বলেন,
“৩১৪ নম্বর রুমে রূপা ও সুপ্তিকে অন্য রুমে যেতে বলেছি। কারণ সেই রুমে দুজন ১৭ ব্যাচের ছাত্রলীগ কর্মী ছিল, এবং প্রভোস্ট ম্যাডাম বলেছিলেন যে রুমগুলো ফ্যাকাল্টির টপ স্টুডেন্টদের দেওয়া হবে। আমি ভুল করেছি — ম্যাডামের অনুমতি ছাড়া তাদের রুম ছাড়ার কথা বলা ঠিক হয়নি। এজন্য আমি দুঃখিত।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
বেগম সৈয়দুন্নেছা হলের প্রভোস্ট বর্তমানে দেশের বাইরে থাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় নেতার প্রতিক্রিয়া
শেকৃবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন,
“ছাত্রদলের কোনো নীতিতে জোর করে কাউকে কর্মসূচিতে নেওয়ার নির্দেশনা নেই। এটি সম্পূর্ণ তাহসিন মুনের ব্যক্তিগত কাজ। ছাত্রদল এমন আচরণ সমর্থন করে না।”
তিনি আরও বলেন,
“কেউ ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও তাকে নিজ দায়িত্বে হল ছাড়তে হবে। কেউ যদি নৈরাজ্য করে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশ্লেষণ: ছাত্র রাজনীতির নামে ভয়ের সংস্কৃতি?
এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তোলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতির প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের উপর চাপ প্রয়োগ কতটা যৌক্তিক? একটি গণতান্ত্রিক সমাজে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিজস্ব মতামত ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে এবং শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে।
রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের নামে যদি একজন শিক্ষার্থীকে তার পড়াশোনার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাহলে তা শুধু অনৈতিক নয়, বরং শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক ধরনের অপরাধ। শেকৃবির প্রশাসন ও ছাত্রসংগঠনগুলোর উচিত, এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের নামে যদি একজন শিক্ষার্থীকে তার পড়াশোনার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাহলে তা শুধু অনৈতিক নয়, বরং শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক ধরনের অপরাধ। শেকৃবির প্রশাসন ও ছাত্রসংগঠনগুলোর উচিত, এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।