ইরানের পরমাণু প্রযুক্তি শুধুমাত্র বিজ্ঞান নয়, এটি এখন জাতির গর্বের প্রতীক। আর এই গর্বকে সামরিক হামলা দিয়ে ধ্বংস করা যাবে না— এমনটাই জানালেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি।
সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ-কে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “বোমা ফেলে কোনও জাতির বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিকে ধ্বংস করা যায় না। শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে আমরা যে প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি অর্জন করেছি, সেটি সামরিক আগ্রাসনে ধ্বংস হবে না।”
এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন ১৩ জুন, ইসরায়েল আকস্মিকভাবে ইরানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। তারা ইরানের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র এই আগ্রাসনে গোয়েন্দা ও সামরিক সহায়তা দিয়ে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ায়।
যুদ্ধের শেষ দিকে, মার্কিন বাহিনী সরাসরি ইরানের মধ্য ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। হামলার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন— “সবকিছু ধ্বংস হয়েছে।”
তবে ট্রাম্পের সেই বক্তব্যের সত্যতা ম্লান হয়ে যায় পেন্টাগনের নিজেদের মূল্যায়নে, যেখানে জানানো হয়, অনেক স্থাপনাই কার্যকর রয়ে গেছে এবং আঘাতে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাত্র।
এ প্রসঙ্গে আরাঘচি বলেন, “আমরা জানি কীভাবে পুনর্গঠন করতে হয়। সদিচ্ছা থাকলে, অল্প সময়েই আমরা ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব। আমাদের পরমাণু শিল্প আগের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে ফিরবে।”
তিনি বলেন, “এই শিল্প এখন আমাদের জাতীয় গর্বের প্রতীক। সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলার সময় পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ ছিল। জনগণ তাদের প্রতিজ্ঞায় অটল রয়েছে— ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি থেকে তারা পিছিয়ে আসবে না।”
আরাঘচি আরও বলেন, “আমরা মাত্র ১২ দিনের একটি চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ মোকাবিলা করেছি। সেই সময়েই প্রমাণ করেছি— ইরান আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত ও সক্ষম।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ভবিষ্যতে যদি কেউ আবারও হামলার চেষ্টা করে, আমরা আরও বেশি দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলব। শত্রুরা এবার যেন প্রস্তুত থাকে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবারও আলোচনায় ফেরার সম্ভাবনা আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে আরাঘচি বলেন, “আমি মনে করি না, এত দ্রুত আবারও আলোচনা শুরু হবে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আলোচনায় ফিরতে হলে প্রথমেই নিশ্চিত হতে হবে যে, কূটনৈতিক প্রক্রিয়া চালু থাকা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র আবার হামলা করবে না।
এই পুরো পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইরান এখন কেবল নিজেদের পরমাণু প্রযুক্তির দিক থেকে নয়, কূটনৈতিক অবস্থানেও আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। আর ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র যদি আগামীতেও চাপ সৃষ্টি করে, তাহলে এবার তারা আগের চেয়ে আরও কঠোর জবাব পাবে— এমন হুঁশিয়ারি এখন ইরান স্পষ্টভাবে দিয়ে দিয়েছে।