বহিষ্কারের পর ‘প্রমাণ চাইলেন লিজা’, আইনি হুমকিতে উত্তাল ছাত্র সংগঠন!
চট্টগ্রাম: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির মুখপাত্র ফাতেমা খানম লিজাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ছাত্র রাজনীতির অঙ্গনে। ‘মাদক সেবন’ এবং ‘অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন’-এর অভিযোগে সংগঠন থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। তবে এই সিদ্ধান্তকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করে দুই ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন লিজা। তিনি অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হলে সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন।
শনিবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির আহ্বায়ক আরিফ মঈন উদ্দীন এবং সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিনের স্বাক্ষরে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংগঠনের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে লিজাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কারের কারণ কী ছিল?
সংগঠনের তরফ থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,
"সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির মুখপাত্র ফাতেমা খানম লিজার মাদক সেবন এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।"
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়,
"জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রায় ১,৪০০ শহীদ এবং অর্ধলক্ষ আহতের আত্মত্যাগে গড়ে ওঠা একটি আদর্শভিত্তিক সংগঠনের সদস্যের এমন কর্মকাণ্ড জনমনে গভীর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।"
এমন পরিস্থিতিতে তাকে সংগঠনের মুখপাত্র পদ থেকে অব্যাহতি এবং বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রতিবাদে ভিডিও বার্তা—লিজার স্পষ্ট ঘোষণা
বহিষ্কারের পরপরই শনিবার রাতে একটি ভিডিও বার্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফাতেমা খানম লিজা। সেখানে তিনি বলেন—
“আজকে সংগঠনের আহ্বায়ক আরিফ মঈন এবং সদস্য সচিব নেজাম উদ্দিন আমার বিরুদ্ধে যে দুইটি অভিযোগ এনেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রথম অভিযোগ—আমি মাদক সেবন করি। আমি বলছি, আগামী দুই ঘণ্টার মধ্যে যদি তারা প্রমাণ দিতে না পারে—আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
লিজা আরও বলেন,
“দ্বিতীয় অভিযোগ—আমি অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করি। এটা ভিত্তিহীন। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, যদি তারা এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ আগামী দুই ঘণ্টার মধ্যে দিতে না পারে, তাহলে আমি এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।”
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংগঠনের অভ্যন্তরে ভিন্ন মতাদর্শ এবং নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব থেকেই এই বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে। ফাতেমা খানম লিজা ছিলেন সংগঠনের একজন সক্রিয় নারী মুখ, যিনি বিভিন্ন সময় নারীর অধিকার, মজুরি বৈষম্য, এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন,
“লিজা কিছুদিন ধরেই সংগঠনের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন। এর জেরেই তাকে সংগঠন থেকে সরিয়ে দিতে এমন একটি কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।”
আন্দোলনের ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ?
একজন মুখপাত্রের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ এবং তারপর তার সরাসরি পাল্টা হুমকির ঘটনা সংগঠনের ভাবমূর্তি ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। বিশেষ করে যখন সংগঠনটি বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি আদর্শিক প্ল্যাটফর্ম বলে দাবি করে, তখন তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতিতেও স্বচ্ছতা থাকা জরুরি।
শেষ কথা: সংঘাত না সমাধান?
বর্তমানে ছাত্র সমাজের একটি বড় অংশ এই ঘটনায় দুইভাগে বিভক্ত। কেউ বলছে, সংগঠনের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল, আবার কেউ বলছে, প্রমাণ ছাড়া এমন পদক্ষেপ আত্মঘাতী। এখন দেখার বিষয়, আগামী দুই ঘণ্টার সময়সীমা পেরিয়ে গেলে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়—লিজা মামলা করেন কিনা, আর সংগঠনের পক্ষ থেকে কী প্রতিক্রিয়া আসে।
এই বিতর্কের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম আরও জটিল হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।