পরকীয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া শহরের হরিশংকরপুর এলাকায় ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ও ভয়াবহ পারিবারিক ট্র্যাজেডি। মঙ্গলবার (১৩ মে) রাতে স্বামী মামুন তার স্ত্রী মেঘলা খাতুনকে গলায় ছুরিকাঘাত করে হত্যাচেষ্টা করেন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেঘলা মারা যান। এ ঘটনার সময় মামুন তার দুই শিশুকন্যাকেও হত্যা করার চেষ্টা করেন এবং পরে নিজেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
ঘটনাটি ঘটে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিশংকরপুর এলাকায় মামুনের নিজ বাসায়। রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ঘটনার সূত্রপাত হয়, যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা চলছিল। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে মামুন স্ত্রী মেঘলাকে ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করেন। এরপর তিনি তাদের দুই শিশু কন্যা কুলসুম (৪) ও জান্নাত (২)-কে মাথার ওপর তুলে নিচে আছাড় মারেন, যেন তাদের জীবন শেষ করে দিতে পারেন। এরপর মামুন নিজেই বটি দিয়ে নিজের গলা ও ঘাড় কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
স্থানীয়রা ঘটনাটি টের পেয়ে দ্রুত চারজনকেই উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে রাত সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেঘলা খাতুন মারা যান। বাকি তিনজন এখনও গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনার বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোশারফ হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি পারিবারিক দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত রূপ। মামুন তার স্ত্রী মেঘলার বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন। এই অভিযোগ নিয়েই দাম্পত্য কলহ দীর্ঘদিন ধরে চলছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেঘলা কিছুদিন আগে এক অজ্ঞাত যুবকের সঙ্গে ঢাকায় চলে যান। পরিবার ও সমাজের চাপের মুখে তিনি আবার স্বামী মামুনের বাড়িতে ফিরে আসেন। তবে দাম্পত্য সম্পর্কে তখন থেকেই ছিল গভীর ফাটল, যা মঙ্গলবার রাতে চরম পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাজীব হাসান বলেন, “মেঘলা নামে এক নারী গলায় গভীর ছুরিকাঘাতে মারা গেছেন। বাকি তিনজন — দুই শিশু ও স্বামী — এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।”
এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোক ও আতঙ্কের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা বলছেন, মামুন একজন রঙমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন এবং সাধারণ জীবনযাপন করতেন। তার এমন উগ্র প্রতিক্রিয়ায় সবাই হতবাক।
এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত কুষ্টিয়া মডেল থানা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। নিহত মেঘলার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ বলছে, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং আত্মহত্যার চেষ্টাকারী স্বামী মামুন সুস্থ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এ ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। নেটিজেনরা বলছেন, একটি পরিবারের ভেতরে থাকা কলহ, সন্দেহ ও মানসিক সমস্যার প্রতিফলনই এমন ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক সমস্যা সমাধানে আইনি সহায়তা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা এখন অত্যন্ত জরুরি।