পৃথিবী কি সত্যিই একদিন সৌরজগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে? এমনই ভয়ংকর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের শীর্ষ মহাকাশবিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণায় চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্ল্যানেটারি সায়েন্স ইনস্টিটিউটের গবেষক ন্যাথান এ. কাইব এবং ফ্রান্সের বোর্ডো বিশ্ববিদ্যালয়ের শন এন. রেমন্ড। তাঁদের মতে, ভবিষ্যতে সৌরজগতের অদূর অতীতে বা দূর ভবিষ্যতে এমন এক মহাজাগতিক ঘটনা ঘটতে পারে, যা পৃথিবীসহ আরও কয়েকটি গ্রহের কক্ষপথে গুরুতর পরিবর্তন আনতে পারে। আর সবচেয়ে চমকে দেওয়া বিষয় হলো—এই ঘটনাগুলোর প্রভাবে পৃথিবী একসময় সৌরজগত ছাড়তেও পারে।
গবেষণাটি মূলত কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, যদি কোনো এক ভ্রাম্যমাণ নক্ষত্র আমাদের সৌরজগতের খুব কাছ দিয়ে চলে যায়, তবে তার মহাকর্ষীয় প্রভাবে আমাদের সৌরজগতে বিশাল অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। বিজ্ঞানীদের ভাষায়, সৌরজগতের প্রত্যেক গ্রহের কক্ষপথে কিছুটা পরিবর্তন ঘটবে, তবে সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখে পড়বে পৃথিবী।
সিমুলেশন অনুসারে, সৌরজগতের যেসব গ্রহের কক্ষপথ তুলনামূলকভাবে কম স্থিতিশীল—তাদের মধ্যে পৃথিবী অন্যতম। অর্থাৎ সামান্য পরিবর্তনেই পৃথিবীর কক্ষপথ বিচ্যুত হয়ে যেতে পারে, এবং একপর্যায়ে হয়তো পৃথিবী সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করাও বন্ধ করে দিতে পারে।
গবেষকরা সতর্ক করে বলেন, আগামী ৪০০ বছরের মধ্যেই এমন নক্ষত্র ঘনিষ্ঠতা ঘটার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিজ্ঞানী কাইব ও রেমন্ডের মতে, “আমাদের সৌরজগত পুরোপুরি একক ও স্থির নয়। এর চারপাশে ঘোরাফেরা করা কোটি কোটি নক্ষত্র রয়েছে। যেকোনো এক নক্ষত্র যদি পর্যাপ্ত কাছাকাছি চলে আসে, তাহলে সৌরজগতে বিশাল বিপর্যয় নামতে পারে।”
তাঁরা আরও বলেন,এই ধরনের বিপর্যয় পৃথিবীকে কেবল কক্ষপথ থেকে সরিয়েই দেবে না, বরং এটি অন্য গ্রহগুলোর সঙ্গেও ধাক্কা বা সংঘর্ষের সম্ভাবনা তৈরি করবে।
একটি বড় আশঙ্কার কথা বিজ্ঞানীরা তুলে ধরেছেন—যদি পৃথিবী তার কক্ষপথ থেকে সরে যায়, তাহলে তা শুক্র বা মঙ্গল গ্রহের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি পৃথিবী সূর্যের সঙ্গে সরাসরি ধাক্কা খেতে পারে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে গবেষণায়।
আরেক ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে বৃহস্পতির বিশাল মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেন, যদি কক্ষপথে সামান্য পরিবর্তন ঘটে, তাহলে বৃহস্পতি তার শক্তি প্রয়োগ করে পৃথিবীকে একেবারে সৌরজগত থেকে বাইরে ছিটকে দিতে পারে। আর একবার সৌরজগত থেকে বেরিয়ে গেলে, পৃথিবী একটি “ভ্রাম্যমাণ গ্রহে” পরিণত হবে—যা সূর্যহীন এক শীতল, অন্ধকার মহাশূন্যে ঘুরে বেড়াবে।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—এই বিপর্যয়ের সম্ভাবনা কতটুকু? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাদের সিমুলেশন অনুসারে এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আপাতত প্রায় ০.২ শতাংশ। যদিও এই হার অল্প মনে হলেও, মহাকাশের নিরিখে এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, একটিমাত্র ঘটনা—একটি নক্ষত্রের পাসিং—এই পুরো ভবিষ্যৎকে বদলে দিতে পারে।
পৃথিবীর সৌরজগত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা এখনো সামান্য, তবে একে একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। বিজ্ঞানীরা এখন আরও বেশি সংখ্যক সিমুলেশন চালিয়ে এর বাস্তবতা যাচাই করছেন।
এখন প্রশ্ন হলো—আমরা কি ভবিষ্যতের সেই ভয়াল দিনকে রুখে দিতে পারব? নাকি একদিন সত্যিই আমাদের পৃথিবী তার চিরচেনা সূর্যকে পেছনে ফেলে অন্ধকার মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে?