close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে প্রেমিকের বাড়িতে অনশনে কিশোরী

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
পরীক্ষা ফেলে প্রেমিকের বাড়িতে অনশনে বসেছেন এক দাখিল পরীক্ষার্থী। তিন বছরের প্রেম, বিয়ের প্রতিশ্রুতি, তারপর প্রতারণা। সময়মতো বিয়ে না হলে আত্মহত্যার ঘোষণা দিয়ে আলোড়ন তুলেছেন ওই কিশোরী। প্রেমিক পরিবারসহ ..

বরগুনার আমতলী উপজেলার পূর্ব চন্দ্রা গ্রামে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা। দাখিল পরীক্ষার্থী এক কিশোরী বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশনে বসেছেন, পরীক্ষা না দিয়ে। প্রেমিক বিয়ে না করলে আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, উপজেলার মহিষকাটা এলাকার এক মাদ্রাসাছাত্রী দীর্ঘ তিন বছর ধরে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন পার্শ্ববর্তী চাওড়া ইউনিয়নের পূর্ব চন্দ্রা গ্রামের কলেজপড়ুয়া যুবক আরিফ মৃধার সঙ্গে। সম্পর্কের শুরুতে আরিফ বিয়ের আশ্বাস দেন। কিশোরীর অভিযোগ, এই আশ্বাসের আড়ালে বারবার তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন আরিফ।

কিন্তু যখন বাস্তবে বিয়ের সময় আসে, তখন আরিফ ও তার পরিবার সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। কিশোরী বলেন, "আমাকে দিয়ে যা চেয়েছে, সব পেয়েছে। এখন বলে—বিয়ে সম্ভব নয়। আমি তো সবই হারিয়েছি, এখন আর পেছনে ফেরার জায়গা নেই।"

৩ এপ্রিল মেয়েটি নিজেই চলে যান আরিফ মৃধার বাড়িতে। সেখানে আরিফের মা তাকে বাড়িতে রাখেন, এমনকি তাদের একসঙ্গে রাত কাটানোর অনুমতিও দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এরপর আরিফের পরিবার তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থানায় পাঠিয়ে দেয়। আমতলী থানা পুলিশ স্থানীয় মনির প্যাদার জিম্মায় তাকে রাখে। কিন্তু এরপর থেকে আরিফ ও তার পরিবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

পরীক্ষার দিনেই অনশন ও আত্মহত্যার হুমকি

বৃহস্পতিবার ছিল দাখিল পরীক্ষার দিন। কিন্তু কিশোরী পরীক্ষাকেন্দ্রে না গিয়ে আবারও আরিফের বাড়িতে গিয়ে উঠেন এবং অনশনে বসে পড়েন। সেখানেই তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরিফ আমাকে বিয়ে না করলে আমি আত্মহত্যা করব। আমি ওর পরিবারে গিয়েছি, এখন তারা পলায়নপর। আমার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।”

স্থানীয়রা জানায়, মেয়েটি একপ্রকার অসহায় অবস্থায় আরিফের বাড়িতে পড়ে আছেন। তার অনশন ও আত্মহত্যার হুমকিতে গোটা গ্রামে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকাবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রুহুল আমিন বলেন, “আমরা দুই পরিবারকে বসে বিষয়টি মীমাংসার কথা বলেছিলাম। তারা কথা দিয়েছিল সমাধান করবে, কিন্তু এরপর থেকে আরিফ ও তার পরিবারকে আর পাওয়া যাচ্ছে না।”

পুলিশ বলছে—মেয়েটির বয়স বিয়ের উপযুক্ত নয়

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, “ঘটনার বিষয়ে আমরা অবগত। মেয়েটির বয়স এখনো আইনি বিয়ের উপযুক্ত নয়, তাই তাকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছি। তবে মেয়েটির পরিবারও তাকে নিতে রাজি হয়নি।”

ওসি আরও জানান, “মেয়েটি বর্তমানে স্থানীয় এক ব্যক্তির জিম্মায় আছেন। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি স্পর্শকাতর, তাই সামাজিক ও পারিবারিক সমাধানের দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।”

উদ্বেগে গ্রামবাসী, অনিশ্চয়তায় মেয়েটির ভবিষ্যৎ

এই ঘটনায় শুধু একটি কিশোরীর জীবন নয়, প্রশ্ন উঠেছে সমাজ ও পরিবারের দায়িত্ব নিয়েও। নাবালিকা প্রেম, শারীরিক সম্পর্ক, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, আইনগত জটিলতা এবং সামাজিক অনুশাসনের মাঝে পড়ে মেয়েটির জীবন এখন দুঃস্বপ্নের পথে।

গ্রামবাসী ও স্থানীয় শিক্ষক-অভিভাবক মহল বলছে, “এভাবে একটা মেয়ে পরীক্ষা ফেলে প্রেমিকের বাড়িতে এসে বসে আছে, এটা সমাজের জন্য ভয়ংকর বার্তা। আরিফ যদি অপরাধ করে থাকে, তার বিচার হওয়া উচিত। মেয়েটির ভবিষ্যৎ যেন নষ্ট না হয়, সেটা দেখা দরকার।”

এই ঘটনায় প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সচেতন মহল।

Nessun commento trovato