এইচএসসি পরীক্ষার দিন সকালে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন মাহিরা বিনতে মারুফ পুলি। লক্ষ্য ছিল রাজধানীর নির্ধারিত পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া। কিন্তু কেউ ভাবেনি, সেই সকালটা তাঁর জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে বের হন মাহিরা। এরপর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও তিনি আর বাসায় ফেরেননি। পরিবারের মধ্যে দেখা দেয় দুশ্চিন্তা। পরীক্ষা শেষ হওয়ার বহু পরে পরীক্ষাকেন্দ্রে খোঁজ নিলে জানা যায়—মাহিরা ওইদিন পরীক্ষায় অংশই নেননি!
এতেই পরিবার আরো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। পরে তারা রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। নিখোঁজ কিশোরীর সন্ধানে শুরু হয় অনুসন্ধান।
কিন্তু ঘটনার মোড় ঘুরে যায় প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর—রাতে সাভার থেকে মাহিরাকে উদ্ধার করে র্যাব। উদ্ধারের পর র্যাবকে দেওয়া নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে মাহিরা জানান এক ভয়াবহ চিত্র।
মাহিরার ভাষ্য অনুযায়ী, বাসা থেকে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে বের হয়ে রাস্তায় এক নারীর ফাঁদে পড়েন তিনি। সেই নারী তার নাকের কাছে কিছু একটা ছোঁয়ায়, যার পর মাহিরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর কী হয়েছে, সেটা তাঁর মনে নেই।
জ্ঞান ফেরার পর তিনি নিজেকে আবিষ্কার করেন সাভারের একটি নির্জন জায়গায়। সেখানে কিছু সময় ছিলেন তিনি। পরে অপহরণকারীরা তার পোশাক পরিবর্তনের জন্য অন্য একটি পোশাক দেয়। সেই সময়টিই তাঁর কাছে ছিল মুক্তির সুযোগ।
তিনি জানান, সেই মুহূর্তেই সুযোগ বুঝে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন এবং জঙ্গল দিয়ে দৌড়াতে থাকেন। কিছুদূর গিয়ে রাস্তায় র্যাবের একটি গাড়ি দেখতে পান তিনি। তখনই সাহস করে গাড়ির সামনে দাঁড়ান ও পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন।
র্যাব তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে গাড়িতে তুলে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায় এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাতেই মাহিরাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
র্যাব জানিয়েছে, মাহিরা যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা এখনো যাচাই করে দেখা হচ্ছে। যদিও প্রাথমিকভাবে তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
র্যাব আরও জানায়, যদি মাহিরার দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে কোনো অপহরণচক্র জড়িত থাকে, তবে তাদের চিহ্নিত করতে তদন্ত শুরু হবে।
ঘটনাটি সামনে আসার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, রাজধানীর ভেতর থেকে একজন শিক্ষার্থী কীভাবে অপহৃত হয়ে সাভারের নির্জন স্থানে গিয়ে পৌঁছায়? তার নিরাপত্তা কোথায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ঘটনা কেবল পরিবারের নয়, সমাজ ও প্রশাসনের জন্যও বড় সতর্কবার্তা।
রাতভর উৎকণ্ঠার পরে মেয়ে ফিরে পাওয়ায় স্বস্তি ফিরে এসেছে মাহিরার পরিবারে। তবে তারা চান, পুরো ঘটনা যেন তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা হয়।
মাহিরার মা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমরা এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না—এই ঘটনা সত্যি। একটা মেয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে এমন ঝুঁকিতে পড়বে, ভাবতেই পারি না।
এইচএসসি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
এখন সময় হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			