পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানালেন, সরকার এখন রাবার কাঠসহ নানা পরিবেশবান্ধব বিকল্প পণ্যকে জনপ্রিয় করতে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফআইডিসি) ক্যাবিনেট ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টে প্রস্তাবিত শো-রুম স্থাপনের স্থান পরিদর্শনে গিয়ে তিনি একথা বলেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সরকার চায় গৃহস্থালি কাঠসামগ্রী আরও সহজলভ্য ও আকর্ষণীয় হোক। সেই লক্ষ্যেই শো-রুম স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।” তিনি যোগ করেন, “বিএফআইডিসি’র পণ্য শুধু দীর্ঘস্থায়ীই নয়, এতে রয়েছে কারিগরি উৎকর্ষ ও দেশীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার। এগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে দেশের বনশিল্প খাতকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার সম্ভাবনা।
উল্লেখ্য, বিএফআইডিসি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাবার কাঠ দিয়ে তৈরি করে আসছে বিভিন্ন গৃহস্থালি ও কাঠসামগ্রী। এদের বৈশিষ্ট্য হলো টেকসই গঠন, মানসম্মত ফিনিশিং ও পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহার। দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিষ্ঠানটি সীমিত পরিসরে কাজ করলেও এবার তা আরও বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
রিজওয়ানা হাসান জানান, এই শো-রুমটি স্থাপন হলে সাধারণ মানুষের কাছে সরকারি উৎপাদনের গুণমান দৃশ্যমান হবে। ফলে জনগণের আস্থা বাড়বে, বাড়বে বিক্রিও।
উপদেষ্টা আরও জানান, “আমি বিএফআইডিসি’র কর্মকর্তাদের বলেছি, শো-রুম স্থাপনের স্থান নির্ধারণ ও অন্যান্য প্রস্তুতি দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞদের মতামতও গ্রহণ করতে হবে।”
তিনি পরিদর্শনকালে প্লান্টের বর্তমান উৎপাদন ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও রাবার কাঠের প্রসেসিং প্রক্রিয়াও ঘুরে দেখেন। তার সঙ্গে ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দীনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাবার কাঠ একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প যা কম খরচে মানসম্মত পণ্য তৈরিতে সক্ষম। এটি শুধু গৃহস্থালি নয়, শিল্প খাতেও বিপ্লব আনতে পারে।
শুধু তাই নয়, রাবার কাঠ দিয়ে তৈরি পণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। ফলে এটি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের উদ্যোগ দেশের পরিবেশবান্ধব শিল্পে নতুন বাজার সৃষ্টি করবে। সরকার যদি সঠিকভাবে বাজারজাত ও গণসচেতনতা বাড়াতে পারে, তাহলে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও বিএফআইডিসি’র পণ্য জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে।
সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। রাবার কাঠ ও পরিবেশবান্ধব পণ্যের মাধ্যমে একদিকে যেমন বনসম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে দেশীয় শিল্প খাত পাবে টেকসই ভবিষ্যৎ। যদি দ্রুত ও পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন হয়, তাহলে এই উদ্যোগ বদলে দিতে পারে পুরো দেশের কাঠশিল্প ও পরিবেশ ভাবনা।