নিউইয়র্কে বিএনপির বিজয় মিছিলে হামলার পর সামাজিক মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেছেন, বিএনপি এখনো আওয়ামী লীগকে চিনতে পারেনি এবং বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েও তাদের প্রতি একধরনের অন্ধ ভালোবাসা পোষণ করছে।
রবিবার, ১১ মে, নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে ইলিয়াস হোসেন লেখেন,
প্রিয় বিএনপির দয়ালু ভাই-বোনেরা, শুভ সকাল। আপনারা আওয়ামী লীগ কী জিনিস সেটা এখনও টের পান নাই। আপনাদের যেই আওয়ামী লীগের জন্যে পরান কান্দে, তারা আজকে নিউইয়র্কে বিএনপির বিজয় মিছিলে হামলা চালিয়ে সেই প্যাদানি দিছে।”
এই বক্তব্যে স্পষ্টভাবেই বোঝা যায়, বিএনপির প্রতি ইলিয়াস হোসেনের একদিকে সহানুভূতি থাকলেও, অন্যদিকে হতাশা আর ক্ষোভ রয়েছে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ও বারবার নিগৃহীত হয়েও প্রতিক্রিয়া না দেখানোর প্রতি।
তিনি আরো বলেন,
পুলিশ না ডাকলে কয়েকজন নেতাকর্মী হয়তো এখন হাসপাতালের বেডে থাকতো। বিএনপি দোচন খাওয়ায় বিশ্বাসী দল। ১৫ বছর ধরে বারবার মার খেয়েও তারা আওয়ামী লীগের প্রতি ভালোবাসা কমায়নি। আশা করি, এই হালকা মারধরের পরেও ভালোবাসা অটুট থাকবে।”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাথে মুখোমুখি রাজনৈতিক লড়াইয়ের পরিবর্তে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার নরমপন্থা নেওয়া হচ্ছে, যা তাদের ক্ষতিই ডেকে আনছে।
নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রবাসী সংগঠনগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। নানা ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, বিক্ষোভ ও মিছিল আয়োজনের ঘটনায় প্রায়ই সংঘর্ষের খবর আসে সংবাদ মাধ্যমে। এবার সেই ধারাবাহিকতায় বিজয় মিছিলেও সহিংসতা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রবাসেও দেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এমন সহিংস আচরণ প্রমাণ করে, দলীয় সংস্কৃতি কীভাবে রাষ্ট্রের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে।
ইলিয়াস হোসেনের মন্তব্য ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে। অনেকে তাঁর বক্তব্যকে সাহসিকতা ও বাস্তবতার প্রতিফলন বলে স্বীকৃতি দিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে বিএনপিকে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেও সমালোচনা করছেন।
এদিকে, বিএনপি নেতাকর্মীদের একাংশ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং নিউইয়র্ক পুলিশের কাছে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের বাইরে বসবাসকারী রাজনৈতিক কর্মীদের মাঝে এমন হিংসাত্মক মনোভাব প্রকট হয়ে উঠছে, যা মূলধারার রাজনীতিকেও প্রভাবিত করছে। প্রবাসীদের এই সংঘর্ষ কেবল দলীয় আবেগ নয়, বরং বৃহৎ রাজনৈতিক ব্যর্থতার প্রতিফলনও বটে।
ইলিয়াস হোসেনের এই বক্তব্য শুধু একটি ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং রাজনৈতিক বোধহীনতা ও সহিংস রাজনীতির এক তীব্র বাস্তব প্রতিচ্ছবি। বিএনপি আসলেই কি নতুন করে ভাববে? নাকি আবারও “দোচন খাওয়া”-র ইতিহাসে একটি নতুন পর্ব লিখবে?