রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অচলাবস্থার পটভূমিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রত্যাশিত বৈঠকে আজ মুখোমুখি বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং দেশটির আলোচিত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’য়।
বিএনপির পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল এই বৈঠকে অংশ নিচ্ছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সালাহউদ্দিন আহমদ।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে আজ সন্ধ্যায় প্রতিনিধি দল যমুনার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।
অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত ফখরুল, নেতৃত্বে মোশাররফ
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমানে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। তার অনুপস্থিতিতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে পাঠানো হয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, বৈঠকটিকে বিএনপি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং এটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৈঠকের সম্ভাব্য এজেন্ডা কী?
যদিও উভয় পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের আলোচ্যসূচি জানানো হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, এই বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা, নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচনের সময়সীমা ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অধ্যাপক ইউনূস বর্তমানে একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতার মাধ্যমে জাতীয় সংকট সমাধানে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির সঙ্গে তার বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিএনপি নেতার মন্তব্য:
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, “আমাদের জানানো হয়েছে যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত আছে।” তার এই বক্তব্য স্পষ্ট করে দেয় যে, বৈঠকটি পূর্ব পরিকল্পিত এবং গুরুত্বসহকারে আয়োজিত।
রাজনৈতিক পটভূমি ও পরিপ্রেক্ষিত:
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন নানা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে সরকার চায় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হোক, অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের মধ্যস্থতামূলক পদক্ষেপ ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমঝোতার সম্ভাবনা তৈরি করছে।
এই বৈঠক শুধু দুই পক্ষের মধ্যে একটি সাধারণ সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়—বরং দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করতে পারে। সমঝোতার পথে এই আলোচনার ফলাফল এখন রাজনৈতিক মহলের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে।