জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষকেরা হয়তো এমন দৃশ্যের প্রত্যাশা করেননি। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে বৈঠকের মাঝপথেই উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
ঘটনাটি ঘটে ৩ জুন (মঙ্গলবার) বিকেলে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আয়োজিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে। যেখানে দেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনের সময়সূচি ও রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও, এক পর্যায়ে তা রূপ নেয় রাজনৈতিক কাঁদা ছোড়াছুঁড়িতে।
দুই দিনব্যাপী এই আলোচনা শুরু হয় ২ জুন, সোমবার। দ্বিতীয় দিনে, মঙ্গলবার, বৈঠকের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন এবং পরে কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে মিলে আমন্ত্রিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের মতামত শোনেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, “৩১ ডিসেম্বরের পর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের কোনো সুযোগ নেই।” তার মতে, এই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে, আর সে অনুযায়ী প্রস্তুত হতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে।
সালাহউদ্দিনের এই বক্তব্যের জবাবে, এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কড়া সুরে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি অভিযোগ করে বলেন,
“কিছু দল ভারতের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়। তাদের বক্তব্য ভারতের বক্তব্যের অনুরূপ। তারা ভারতের সুরেই নির্বাচনের কথা বলছে।”
এই মন্তব্য ঘরেই যেন বিস্ফোরণ ঘটায়। প্রধান উপদেষ্টার সামনে এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হন সালাহউদ্দিন।
সালাহউদ্দিন মুখ খুলতেই স্পষ্ট ও কড়া ভাষায় বলেন:
“ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইলে যদি ভারতের সুরে কথা বলা হয়, তাহলে যারা নির্বাচন পেছাতে চায়, তারা নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীনের সুরে কথা বলছে!”
এই বাক্য বিনিময়ের সঙ্গে সঙ্গেই বৈঠকের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুই নেতার মধ্যে শুরু হয় সরাসরি তর্কবিতর্ক, যা পুরো বৈঠককক্ষ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের তর্ক থামাতে অন্য রাজনৈতিক নেতারা হস্তক্ষেপ করেন এবং পরিস্থিতি সামাল দেন।
বৈঠকের পর সালাহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন,
“আমরা বিশ্বাস করি, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা সম্ভব। নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতীয় ঐকমত্য গঠনে সময়ক্ষেপণ করে লাভ নেই।”
অন্যদিকে, নাহিদ ইসলাম তার অবস্থানে অনড়। তিনি বলেন,
“জুলাই সনদের বাস্তবায়নের আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলে তা সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আগে প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হোক, তারপর নির্বাচন।”
এই বৈঠক যে ঐকমত্য নয়, বরং বিভক্তির ইঙ্গিত দিয়েছে, তা বলাই যায়। একদিকে বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায়, অন্যদিকে এনসিপি ও কিছু ছোট দল নির্বাচন পেছাতে চায় রাজনৈতিক সংস্কার ও অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। কিন্তু এই বৈঠকে দুই নেতার সরাসরি তর্ক গোটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ভঙ্গুর বাস্তবতাকে আবার সামনে এনে দিয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগ যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য তৈরির জন্য নেওয়া হয়েছিল, সেখানে এমন বৈঠককক্ষে মুখোমুখি সংঘর্ষ আশঙ্কা বাড়িয়ে দিল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে। সালাহউদ্দিন ও নাহিদ ইসলামের কথোপকথন ছিল মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতিচ্ছবি—যেখানে সময়ের চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে পরস্পরের প্রতি অনাস্থা ও সন্দেহ।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			