বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে অব্যবস্থাপনায় নিমজ্জিত বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ—এমন মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাই না। তবে উপদেষ্টা পরিষদে যেসব বিতর্কিত ব্যক্তি রয়েছেন, তাদের অপসারণ করে একটি গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর দল গঠন করতে হবে।
শনিবার রাজধানীতে “গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব মন্তব্য করেন তিনি। আলোচনায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, প্রশাসনিক অব্যবস্থা, এবং ভবিষ্যতের নির্বাচনী পথনকশা নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ উঠে আসে।
নুর বলেন, “জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্রদের নেতৃত্বে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেখানে এখন ফাটল দেখা দিয়েছে। এর মূল কারণ হলো, বর্তমান সরকার ছাত্র ও তরুণদের চাহিদাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টা ছাত্রদের ওপর বিরক্ত—এটা শুধু দুঃখজনক নয়, বরং গণতন্ত্রকে অস্বীকার করার সামিল।”
তিনি আরও বলেন, “গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্রীয় সংস্কার, এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিগুলো এখনো মুলতবি। কিন্তু যখনই আমরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলি, তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে সদুত্তর মেলে না। সরকারের নেপথ্যে এখনো সক্রিয় রয়েছে ওয়ান ইলেভেনের সময়কার সেই দুষ্টু চক্র, যারা স্বৈরশাসনকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।”
নুরুল হক নুর স্পষ্ট করে জানান, অনির্বাচিত সরকারের অধীনে কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। বরং এতে করে আরও নতুন নতুন সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। “সংকট নিরসনে এখন দরকার একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ—যেখানে থাকবে নির্দলীয় নির্বাচনের সময়সূচি, সংবিধান সম্মত প্রক্রিয়ায় সরকারের রদবদল, এবং সর্বস্তরের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক সংলাপ।”
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যখন রাষ্ট্রীয় সংকট সামনে আসে, তখন সরকারের করিডরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অথচ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার কোনো পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় না। অতীতে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংলাপ হয়েছে, তাহলে এখন কেন সেই উদ্যোগ নেই?”
তিনি আরও যোগ করেন, “দেশে যতদিন অনির্বাচিত উপদেষ্টা পরিষদ ও তাদের অস্বচ্ছ কার্যকলাপ থাকবে, ততদিন জনগণের আস্থা অর্জন সম্ভব হবে না। আমাদের প্রধান উপদেষ্টার ওপর আস্থা আছে, কিন্তু যেসব উপদেষ্টা বিতর্কিত ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, তাদের বাদ দিয়ে একটি নতুন কাঠামো গঠন এখন সময়ের দাবি।”
আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, অবিলম্বে সর্বদলীয় আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমঝোতার পথে হাঁটতে হবে। না হলে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
নুরুল হক নুরের বক্তব্য শুধুই কোনো দলীয় অবস্থান নয়, বরং একটি বৃহৎ রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারে জাতীয় ঐক্য এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।