প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির বৈঠক নিয়ে কানাঘুষা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জাতীয় নির্বাচনের আগে হঠাৎ গোপন বৈঠক করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসি। নির্বাচনের সম্ভাব্য দিন ঠিক হয়েছে কি না—সে প্রশ্নে দেশজুড়ে উত্তেজনা!..

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীনের ‘ওয়ান-টু-ওয়ান’ বৈঠক। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এই আকস্মিক বৈঠক গণমাধ্যমকে এড়িয়ে গোপনীয়তায় অনুষ্ঠিত হলেও রাজনৈতিক মহলে এর প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়েছে আগুনের মতো।

এর আগে ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক এবং তাতে ‘২০২৬ সালের রমজানের আগেই নির্বাচন’ আয়োজনের আলোচনা ছিল অন্যতম ইস্যু। এবার প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির এই বৈঠককে সে আলোচনারই সরাসরি ফলোআপ মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে এমন বৈঠক আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল। এই বৈঠককে তারা একটি ‘ইতিবাচক রাজনৈতিক অগ্রগতি’ হিসেবে দেখছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন দল ও জোটও বিষয়টিকে আশাবাদী চোখে দেখছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত করার বিষয়ে জোর আলোচনা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে যে কোনো দিন ভোটগ্রহণ হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। বিশেষ করে ১২ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার দিনটিকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে। কারণ, চাঁদ দেখা অনুযায়ী ১৮ ফেব্রুয়ারি রোজা শুরু হতে পারে। ফলে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া সময়সীমা—রমজানের আগেই নির্বাচন—মানতে গেলে ১৭ ফেব্রুয়ারির আগেই ভোটগ্রহণ আবশ্যক।

সেই দিক থেকেই এই বৈঠক হতে পারে নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্তকরণের বড় ধাপ।

এ বৈঠকের আগেই নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, সরকারের সঙ্গে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে আলোচনায় বসলে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে ইসি সিদ্ধান্ত নেবে বলে মন্তব্য করেছিলেন সিইসি এএমএম নাসির উদ্দীন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে—এই হঠাৎ বৈঠকের মাধ্যমেই কি সেই আলোচনার সূচনা হলো? বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বক্তব্য অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের ‘সবুজ সংকেত’ এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসি সম্ভবত নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ফেব্রুয়ারির বিষয়েই আলোচনা করেছেন। তার মতে, প্রস্তুতি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নেওয়া সম্ভব। দুই পক্ষের পক্ষ থেকেই কোনো ঘোষণায় বিষয়টি পরিষ্কার হবে বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে সব দলই একমত হলে, ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনও সম্ভব হবে না।” অর্থাৎ, সময় এখন একটাই দিকে তাকিয়ে—সংসদ নির্বাচন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যমুনায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠককে লন্ডনের বৈঠকের সিক্যুয়েল বলেই গণ্য করা হচ্ছে। তাদের মতে, সাবেক দুই সিইসির গ্রেপ্তার, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, সীমানা পুনর্বিন্যাস—এসব ইস্যুতে আলোচনার দরকার ছিল অনেক আগে। তারা আশা করছেন, এমন বৈঠক অব্যাহত থাকলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও সংস্কার নিয়ে আলাপ করতেই হবে। অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আইনগত প্রক্রিয়া দরকার। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।”

ইসি সূত্র জানিয়েছে, যদি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচন হয়, তাহলে তফসিল ঘোষণা করতে হবে ডিসেম্বরে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন সামগ্রীর কেনাকাটা সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে চায় তারা।

ইসি সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “আমরা প্রস্তুতির সব কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি। সময় এখন সীমিত।”

সব মিলিয়ে বলা যায়, জাতীয় নির্বাচনের জন্য দেশ প্রস্তুত হচ্ছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে। প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির আকস্মিক বৈঠক এই পথে এক বিশাল পদক্ষেপ। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা—কবে ঘোষণা আসবে সেই বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচনের নির্দিষ্ট দিন।

Không có bình luận nào được tìm thấy