ঢাকা, ১৮ এপ্রিল:
বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সমস্যা সমাধানে দূতাবাসগুলোর ভূমিকাকে আরও মানবিক ও কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, “সবার আগে প্রবাসীদের সমস্যা সমাধান করতে হবে। সীমাবদ্ধতা থাকলেও সেবা দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।”
শুক্রবার ‘ফরেন সার্ভিস ডে’ উপলক্ষে কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমাদের কর্মীদের বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে অধিকাংশ সমস্যার উৎপত্তি ঘটে নিজ দেশেই। বিদেশে যাওয়ার আগে যদি যথাযথ প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যাও অনেকাংশে কমে যেত এবং দূতাবাসগুলোর ওপরও চাপ হ্রাস পেত।”
তৌহিদ হোসেন স্পষ্ট করে দেন যে, একজন প্রবাসী তার আয়-রোজগারের পাশাপাশি দেশেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তিনি বলেন, “১৯৮০-এর দশকে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র এক বিলিয়ন ডলার, আর এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ বিলিয়ন ডলারে। এই অগ্রগতিতে কিছুটা হলেও দূতাবাসের ভূমিকা রয়েছে।”
তিনি জানান, বর্তমানে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি প্রবাসী দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। তাদের পাঠানো অর্থ দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে। “সুতরাং এই বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ অত্যন্ত জরুরি,” মন্তব্য করেন তিনি।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আরাকান আর্মি। বাংলাদেশ এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারছে না, আবার তাদের পুরোপুরি উপেক্ষাও করতে পারছে না।” ফলে এই সংকটের কূটনৈতিক সমাধান বের করাই এখন সবচেয়ে বড় কাজ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কূটনৈতিক ইতিহাস স্মরণ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় বৈশ্বিক জনমত গঠনে ফরেন সার্ভিসের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল, মাত্র ৬৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়ে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন গঠিত হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির লড়াই।”
তিনি বর্তমান কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের উত্তরসূরিরা আজ আরও বড় দায়িত্বে আছেন। তাই শুধু ফরমাল দায়িত্ব পালন নয়, জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই কাজ করতে হবে।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্য কেবল একটি আনুষ্ঠানিক বার্তা নয়, বরং এক ধরনের রূপরেখা—যার মাধ্যমে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর ভবিষ্যৎ ভূমিকা এবং প্রবাসীদের প্রতি দায়িত্ববোধের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।