ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসসহ ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চলে চলছে এক ভয়াবহ তাপপ্রবাহ, যা জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তীব্র গরমের কারণে ফ্রান্সের আবহাওয়া বিভাগ মঙ্গলবার রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। তাপমাত্রা এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিশ্বের অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ প্যারিসের আইফেল টাওয়ার সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশটির ১৬টি অঞ্চলে সর্বোচ্চ দাবদাহ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ও পূর্ব ফ্রান্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় তাপমাত্রা বিপজ্জনক হারে বেড়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ১,৩৫০টিরও বেশি স্কুল আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করেছে যাতে শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত গরমে আক্রান্ত না হয়।
এই তাপপ্রবাহ শুধু ফ্রান্সেই সীমাবদ্ধ নয়। ইউরোপের অন্যান্য দেশ যেমন ইতালি, স্পেন, জার্মানি, পর্তুগাল ও গ্রিসসহ দক্ষিণ ও মধ্য ইউরোপেও সর্বোচ্চ তাপ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জনজীবন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলছে।
জার্মানির আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার ও বুধবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। এই তীব্র গরমে রাইন নদীর পানির স্তর উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় পণ্যবাহী জাহাজগুলোর চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। পানির স্তর কমে যাওয়ায় জাহাজগুলোকে সীমিত মালবোঝাই নিয়ে চলতে হচ্ছে, যা পরিবহন খরচ বাড়িয়েছে এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটিয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বলকান অঞ্চলের দেশগুলোরও অবস্থা অত্যন্ত সংকটময়। যদিও কিছু স্থানে সামান্যভাবে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে, তবে সেখানে তাপপ্রবাহের প্রভাব কমেনি। ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন দেশের সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগ জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের বাড়ির বাইরে কম বের হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
অনেক জায়গায় ঠান্ডা বিশ্রাম কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং পানির ছিটা স্প্রে করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে যাতে গরমের তীব্রতা কিছুটা প্রশমিত হয়। তবে তাপপ্রবাহের এই অবস্থা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে এর প্রভাব পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
তাপপ্রবাহের কারণে ইউরোপজুড়ে জনজীবন অস্থির ও বিপর্যস্ত হলেও দেশের কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া ও তাপমাত্রার ওপর সকলে কড়া নজর রাখছে, যাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এত বড় তাপপ্রবাহ ও দাবদাহে সামনের দিনে পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা থাকায় ইউরোপের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।



















