পিএসসির গাড়িচালকের ‘সম্পদের পাহাড়’! ছয়তলা ভবন, জমি ও কোটি টাকার সম্পদ জব্দ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সরকারি চাকরির একটি নিম্ন পদে থেকে কীভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ? দুদকের তদন্তে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। পিএসসির অবসরপ্রাপ্ত গাড়ি চালক আবেদ আলীর নামে রয়েছে ছয়তলা ভবন, দুইটি ফ্ল্যাট, গাড়ি, ব্যাংক ব্যা..

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অবসরপ্রাপ্ত গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর নামে কোটি টাকার সম্পদের হদিস পেয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসনজুড়ে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার নামে থাকা একাধিক সম্পদ জব্দের আবেদন করলে, আদালত সোমবার (৭ এপ্রিল) তা মঞ্জুর করেন। এই আদেশের মধ্য দিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে—সরকারি চাকরির একেবারে নিচের স্তরে থেকেও কীভাবে অর্জিত হলো এত বিপুল সম্পদ?

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব, দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় দেন। দুদকের পক্ষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আল আমিন আদালতে আবেদন পেশ করেন, যেখানে আবেদ আলীর স্থাবর ও অস্থাবর সব সম্পদ জব্দ করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, আবেদ আলীর নামে রয়েছে—একটি ব্যক্তিগত গাড়ি, ১৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট ৭৮ লাখ ৫৯ হাজার ১৯৮ টাকা, রাজধানীর মিরপুর পীরেরবাগে একটি ছয়তলা বাড়ি এবং পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় দুটি ১,১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। এছাড়াও তার নামে রয়েছে ৮ দশমিক ৮৮ বিঘা জমি।

এই সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৭৯৭ টাকা

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে থেকে সংশ্লিষ্ট সম্পদ জব্দের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হয়। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রুহুল ইসলাম খান আদালতে এই আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এবং বিচারক তা মঞ্জুর করেন।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পিএসসির গাড়ি চালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কিংবা অবসরের পরেও আবেদ আলী জীবনের নামে যে সম্পদ অর্জিত হয়েছে, তা তার স্বাভাবিক আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ সকল সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তরের আশঙ্কা থাকায়, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সেগুলো অবরুদ্ধকরণ জরুরি হয়ে পড়ে।

এদিকে, এই ঘটনায় প্রশাসনের ভেতরেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, একজন গাড়ি চালকের পক্ষে এত সম্পদ অর্জন অসম্ভব, যদি না পেছনে থেকে থাকে দুর্নীতির জটিল চক্র। এর পেছনে আরও বড় কোনো সিন্ডিকেট বা যোগসাজশ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পিএসসির একজন সাবেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই ধরনের ঘটনায় পুরো প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। একজন গাড়ি চালকের এত সম্পদের উৎস কীভাবে সম্ভব, তা অবশ্যই অনুসন্ধান করে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।”

দুদক বলছে, এই জব্দকৃত সম্পদ ছাড়াও আরও কিছু স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে, যা নিয়ে আরও বিস্তৃত অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।

এ ঘটনায় সাধারণ জনগণের মাঝেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই লিখছেন, “সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি এতটাই গেঁথে গেছে যে একজন গাড়ি চালকও আজ কোটি কোটি টাকার মালিক!”

উল্লেখ্য, দেশের দুর্নীতি বিরোধী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক ইতোমধ্যে বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আলোচনায় এসেছে। আবেদ আলীর ঘটনায় তারা আরও একবার প্রমাণ করেছে যে, দুর্নীতিবাজ যেই হোক—চাকরির পদমর্যাদা যাই হোক—কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

No comments found


News Card Generator