যেখানে মাঠে নেমেই আন্ডারডগরা লিখে ফেলে নতুন ইতিহাস। ফুটবলের মঞ্চে পরিচিত এই চিত্রেরই পুনরাবৃত্তি ঘটল ক্যালিফোর্নিয়ার রোজ বোল স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় মুখোমুখি হয় ফরাসি পরাশক্তি পিএসজি ও ব্রাজিলিয়ান ক্লাব বোতাফোগো। ম্যাচের আগে কেউ যদি বলত, পিএসজিকে হারাবে বোতাফোগো, সেটা বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন ছিল। কিন্তু ফুটবল বারবার দেখিয়ে দেয়—জেতার জন্য শুধু নাম নয়, চাই সাহস, কৌশল আর আত্মবিশ্বাস।
পিএসজিকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইতিহাসই গড়ল বোতাফোগো। ম্যাচের একমাত্র গোলটি আসে প্রথমার্ধের ৩৬তম মিনিটে। সতীর্থ জেফারসন সাভারিনোর দুর্দান্ত এক পাস থেকে গোলটি করেন স্ট্রাইকার ইগর জেসুস। সেই গোলই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় এবং শেষ বাঁশি বাজার পর বোতাফোগো তুলে নেয় নিজেদের জীবনের অন্যতম স্মরণীয় জয়। এই জয়ের মাধ্যমে গ্রুপ পর্বে দুটি ম্যাচেই জয় তুলে নিয়ে তারা পৌঁছে গেছে শেষ ষোলোতে। প্রথম ম্যাচে সিয়াটল সাউন্ডার্সকে হারিয়েছিল ২-১ গোলে।
মাঠের খেলা পরিসংখ্যানে পিএসজি ছিল এগিয়ে। ৭৫ শতাংশ সময় বলের নিয়ন্ত্রণে ছিল ফরাসি ক্লাবটি, শট নিয়েছিল মোট ১৬টি—তবে লক্ষ্যে ছিল মাত্র ২টি। বিপরীতে, বলের দখলে পিছিয়ে থাকা বোতাফোগো নিয়েছে ৪টি শট, যার প্রতিটিই ছিল লক্ষ্যে। গোলের লক্ষ্যে নিখুঁত নিশানাভেদ আর রক্ষণে শক্ত অবস্থানই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। বোতাফোগোর রক্ষণ এতটাই গোছানো ছিল যে, পিএসজির ফরোয়ার্ডরা খুব বেশি সুযোগই তৈরি করতে পারেনি।
এই ম্যাচের আগে অপ্টার সুপারকম্পিউটারের হিসাব বলছিল, পিএসজির জয়ের সম্ভাবনা ৮১.৯ শতাংশ। সর্বশেষ তিন ম্যাচে তারা গোল করেছিল ১২টি, খায়নি একটি গোলও। অথচ এমন ফর্মেও বোতাফোগোর বিপক্ষে ম্যাচে নিজেদের ফিরে পেতে ব্যর্থ হয় এনরিকের দল। বড় তারকায় ঠাসা দলটি পুরো ম্যাচেই যেন এক রকম ছন্দহীন ছিল।
৫৩ হাজার ৬৯৯ দর্শকের সামনে পাওয়া এই জয়ে নতুন ইতিহাস লিখেছে বোতাফোগো। ফিফার কোনো টুর্নামেন্টে এটাই প্রথমবার, যখন কনমেবলের (দক্ষিণ আমেরিকা) কোনো দল হারাল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নকে। ক্লাব বিশ্বকাপে দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাবগুলোর এটি টানা অষ্টম ম্যাচে অপরাজিত থাকার কীর্তি—যার মধ্যে রয়েছে ৫টি জয়, ৩টি ড্র।
ম্যাচ শেষে আবেগঘন মুহূর্তে নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন ম্যাচের নায়ক ইগর জেসুস। বলেন, “যখন আমি দেয়াল বেয়ে দর্শকদের দিকে যাচ্ছিলাম, সত্যি বলতে, তখন সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছিল। আমি শুধু ধন্যবাদ দিতে চাই সবাইকে, যারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে। বোতাফোগোতে যখন এসেছিলাম, অনেকে সন্দেহ করেছিল আমার সামর্থ্য নিয়ে। কিন্তু আমি জানতাম, আমি এই দলকে কী দিতে পারি। আমি গর্বিত, আমি যা গড়েছি, তা আমার বিশ্বাসের ফল।”
২৪ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার দুর্দান্ত সময় পার করছেন। টানা চার আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল করেছেন তিনি। শুধু গোল করেই নয়, উদ্যাপনেও নজর কেড়েছেন তিনি। ক্লাব বিশ্বকাপের মঞ্চে এমন এক আন্ডারডগ গল্প, যা মনে রাখবে বিশ্ব ফুটবল।