close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

পহেলা বৈশাখে ‘ফ্যাসিস্ট’ আঁকার অভিযোগে চিত্রশিল্পীর বাড়িতে আগুন, ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৬..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মানিকগঞ্জে চিত্রশিল্পীর বাড়িতে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় উঠে এলো রাজনৈতিক ছায়া। ‘মিশন কমপ্লিট’ লেখা পোস্ট করে ধরা পড়লেন ছাত্রলীগ নেতা। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬ জন, জিজ্ঞাসাবাদে মিলছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।..

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগে ছাত্রলীগের একাধিক নেতাসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি শুধু একটি অগ্নিসংযোগ নয়—বরং এক ভয়াবহ বার্তা, যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শিল্পের স্বাধীনতা, এবং নিরাপত্তা—সবকিছুকেই চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সদর উপজেলা ছাত্রলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক আল-আমিন ওরফে তমাল (২২), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাইনউদ্দিন আহাম্মদ পিয়াস (২২), ছাত্রলীগ নেতা মীম মারুফ, আমিনুর রহমান (২৪), গড়পাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন (৫৪) এবং ছাত্রলীগ নেতা খান মোহাম্মদ রাফি ওরফে সিজন (১৮)।

ওসি আমান উল্লাহ জানান, চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষ বুধবার (১৬ এপ্রিল) অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পরই পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে এবং সন্দেহভাজন হিসেবে এই ছয়জনকে আটক করা হয়।

'মিশন কমপ্লিট'—সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কিত পোস্ট

গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রলীগ নেতা খান মোহাম্মদ রাফি ওরফে সিজনকে ঘিরেই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। কারণ, অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন, যেখানে লেখা ছিল—‘মিশন কমপ্লিট’। পুলিশ মনে করছে, এই পোস্টটি ঘটনার সরাসরি স্বীকারোক্তির মতোই। তদন্তকারীরা আশা করছেন, রাফির কাছ থেকে এই হামলার পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে।

কি ঘটেছিল সেদিন রাতে?

সোমবার (১৫ এপ্রিল) দিবাগত রাতে, পহেলা বৈশাখের রাত। ওই রাতে মানিকগঞ্জ শহরের গড়পাড়ায় চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে হঠাৎই আগুন লাগে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষ একটি মুখাবয়ব আঁকেন, যা দেখতে ফ্যাসিস্ট শাসকের মতো ছিল। এ নিয়েই ক্ষোভ তৈরি হয় একটি পক্ষের মধ্যে। কেউ কেউ বিষয়টিকে ‘ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক ইঙ্গিত’ হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করে ফেলে। এর পরই শুরু হয় হামলার প্রস্তুতি।

স্থানীয়দের দাবি, রাতে কিছু দুর্বৃত্ত এসে বাড়ির চারপাশে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় চিত্রশিল্পীর বসতঘরে। সৌভাগ্যক্রমে প্রাণহানি ঘটেনি, তবে পরিবারটি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

পুলিশ কী বলছে?

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা পোস্ট ও কল রেকর্ড ইতিমধ্যে জব্দ করা হয়েছে। বিশেষ করে খান মোহাম্মদ রাফির পোস্ট এবং পূর্বের যোগাযোগ বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হামলা ছিল কিনা।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই বলছেন, একজন শিল্পীর স্বাধীনভাবে ছবি আঁকাও যদি কারও জন্য সহ্যযোগ্য না হয়, তবে সেটি স্বাধীন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। তারা অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষ নিজেও শঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, “আমি কোনো ধর্ম বা দলকে আঘাত করিনি। কেবল আমার শিল্প দিয়ে সমাজের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সেই অপরাধে আমার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হলো! এটা কোনো সভ্য সমাজ হতে পারে না।”

শেষ কথা

এই ঘটনার মাধ্যমে শুধু একটি বাড়িতে আগুনই দেওয়া হয়নি, বরং শিল্প ও স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ হয়েছে। তদন্তে যদি প্রমাণিত হয়, এই হামলার পেছনে রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক ইন্ধন ছিল, তাহলে এটি দেশের গণতন্ত্র, শিল্প-সংস্কৃতি এবং বাকস্বাধীনতার জন্য এক গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠবে।

Nema komentara


News Card Generator