close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

পানি চুক্তি স্থগিতে জাতিসংঘে ভারতকে তুলোধুনো করল পাকিস্তান..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারতের একতরফা সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে বিস্ফোরক ভাষণে মুখ খুলেছে পাকিস্তান। দেশটি অভিযোগ করেছে, এই পদক্ষেপ ২৪ কোটিরও বেশি মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। নিরাপত্তা পরিষ..

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা কমে এলেও কূটনৈতিক সম্পর্কের উত্তাপ বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ভারতের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত—সিন্ধু নদ নিয়ে হওয়া ঐতিহাসিক পানি চুক্তি স্থগিত করা—দুই দেশের মধ্যে নতুন করে বিরোধের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে এবার সরাসরি জাতিসংঘে ভারতকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করল পাকিস্তান।

জাতিসংঘে ‘সশস্ত্র সংঘাতে পানিসম্পদ সুরক্ষা’ বিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে পাকিস্তান এককভাবে ভারতের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। পাকিস্তান জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উদ্দেশে বলে, ভারতের এমন পদক্ষেপ শুধু আন্তর্জাতিক আইন নয়, মানবিক নীতিমালারও চরম লঙ্ঘন এবং এটি ভবিষ্যতে আঞ্চলিক শান্তির জন্য বড় ধরনের হুমকি হতে পারে।

জাতিসংঘে পাকিস্তানের ডেপুটি স্থায়ী প্রতিনিধি উসমান জাদুন বলেন, “ভারতের সিদ্ধান্ত ২৪ কোটির বেশি মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর সরাসরি আঘাত হেনেছে। সিন্ধু নদ শুধু একটি জলধারা নয়, এটি পাকিস্তানের জন্য জীবনরেখা।” তিনি আরও বলেন, “ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের কিছু মন্তব্য যেমন 'পাকিস্তানিদের না খাইয়ে মারব'—এটি একটি বিকৃত ও বিপজ্জনক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ, যা শুধু ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিকেও হুমকির মুখে ফেলছে।”

পাকিস্তান জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করে বলেছে, এই ধরনের পানি-নির্ভর কূটনৈতিক চাপ আসলে এক ধরনের ‘ওয়াটার ওয়ারফেয়ার’। ইসলামাবাদের মতে, পানিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক রীতিনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থি। উসমান জাদুন বলেন, “এ ধরনের আচরণ শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়, বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত মানবিক বিপর্যয়ের সূচনা হতে পারে।”

তিনি জাতিসংঘকে আহ্বান জানান, ভারতকে যেন তার আইনি বাধ্যবাধকতা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। পাকিস্তানের দাবি, চুক্তির আওতায় থাকা নদীগুলোর পানির প্রবাহ কোনোভাবেই বন্ধ বা ঘুরিয়ে দেওয়া চলবে না, এবং যদি ভারত এমনটি করে, তবে তা এক প্রকার যুদ্ধ ঘোষণা বলেই গণ্য হবে।

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া:

বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান এবার কৌশলগতভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতকে কোণঠাসা করতে চাইছে। ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ ছিল ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত একটি ঐতিহাসিক সমঝোতা, যা বিশ্বব্যাপী এক শান্তিপূর্ণ পানি বণ্টন চুক্তির উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হত। ভারতের এই চুক্তি স্থগিত করা আন্তর্জাতিক মহলেও বেশ আলোচনা তৈরি করেছে।

জাতিসংঘের অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র এখন এই ইস্যুতে দ্বিধাবিভক্ত। কেউ কেউ ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে সামনে রেখে নীরব ভূমিকা পালন করছে, আবার কেউ কেউ পাকিস্তানের বক্তব্যে সহানুভূতি প্রকাশ করছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পানি নিয়ে দ্বন্দ্ব শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, বিশ্বব্যাপী নতুন নিরাপত্তা সংকট তৈরি করতে পারে বলেও সতর্ক করেছে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

পানি: নতুন যুদ্ধক্ষেত্র?

বিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা ও অভিবাসন নিয়ে চিন্তিত, তখন দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে পানির জন্য নতুন বিরোধ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। পাকিস্তান এটিকে অস্তিত্বের প্রশ্ন হিসেবে দেখছে, যেখানে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। এই অবস্থায় যদি জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা না নেয়, তবে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।


 

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদ নিয়ে নতুন উত্তেজনা কেবল দু’দেশের মধ্যে দ্বন্দ্বই নয়, বরং এটি একটি বড় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে একবিংশ শতকের পরবর্তী যুদ্ধ হয়তো হবে "পানির জন্য" — আর তার সূচনা হয়ে যেতে পারে এই সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের মাধ্যমে।

Không có bình luận nào được tìm thấy