বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রের দিন শেষ। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আর সেই অধিকারকে কেন্দ্র করেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সঠিক গন্তব্যে।’—এমনই দৃঢ় বার্তা দিলেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. মুশফিকুল ফজল আনসারী।
শনিবার (২১ মে) সিলেট নগরীর পিটিআই মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত আনসারী বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ আজ তাদের হারানো অধিকার পুনরুদ্ধার করেছে। আর এই অধিকারেই তারা এখন দেশ গঠনে অংশ নিচ্ছে। এ দেশের জনগণ এখন আর চুপ করে বসে থাকবে না। গুম-খুনের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের দমন করা যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “যারা একসময় অন্যায় ও নিপীড়নের মধ্য দিয়ে দেশ শাসন করেছে এবং আজ পালিয়ে বেড়াচ্ছে, তারা যদি মনে করে—‘সময় এসেছে আবার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফিরে আসার’, তবে তারা ভুল ভাবছে। ‘ঝোপ বুঝে কোপ মারা’র বাংলাদেশ আর নেই। এই দেশ এখন জেগে উঠেছে, দেশবাসী জানে কীভাবে নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে হয়।”
রাষ্ট্রদূত আনসারীর বক্তব্যে বারবারই উঠে এসেছে একটি বিষয়—জনগণের ঐক্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এই অর্জনকে টিকিয়ে রাখতে হলে দরকার একটি সার্বজনীন ও ইস্পাত কঠিন ঐক্য। জাতি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তবে কেউ এই দেশের অগ্রযাত্রাকে রুখতে পারবে না।”
প্রবাসীদের পাশে সরকারের শক্ত অবস্থান
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রবাসীদের কল্যাণে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগের বাস্তবায়ন ঘটে। সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মোট ১৫৪টি প্রবাসী পরিবারকে মোট ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
অনুদান বিতরণ করা হয় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে—কেউ কেউ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো প্রবাসীর পরিবার, কেউ চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা প্রবাসীর পরিবার, আবার কেউ আর্থিক সংকটে পড়া প্রবাসী সদস্য। এই সহায়তা দিয়ে সরকার প্রমাণ করেছে, বিদেশে কাজ করতে যাওয়া প্রতিটি বাংলাদেশিই দেশের অমূল্য সম্পদ।
নেতৃত্বে মানবিক রাষ্ট্রদূত
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রদূত আনসারী যেমন কৌশলী রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন, তেমনি মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে। তিনি বলেন, “আমরা যারা দেশের বাইরে কাজ করি, তারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করি। প্রবাসীদের কষ্ট ও অবদান সরকার গভীরভাবে মূল্যায়ন করে। আজকের এই সহায়তা তারই প্রতিফলন।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ব্যারিস্টার মো. গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া। তিনি বলেন, “এই উদ্যোগ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। প্রবাসীদের জন্য কল্যাণমূলক কাজ আরও বিস্তৃত করা হবে।”
রাজনৈতিক বার্তা নাকি ভবিষ্যতের হুঁশিয়ারি?
রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তার পাশাপাশি একটি শক্ত বার্তা ছিল—বাংলাদেশের জনগণ এখন অনেক বেশি সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ। ভবিষ্যতে কোনো অপশক্তি দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাইলে তা কঠোর প্রতিরোধের মুখে পড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্য শুধু একটি বক্তৃতা নয়, বরং এটি একটি হুঁশিয়ারি। এমনকি যারা প্রবাসে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদের জন্যও এটি একটি শক্ত রাজনৈতিক বার্তা।
রাষ্ট্রদূত আনসারীর বক্তব্যে ফুটে উঠেছে এক নতুন আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি—যেখানে জনগণ আর ভয় পায় না, বরং নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার। আর প্রবাসীদের কল্যাণে সরকারের পদক্ষেপ প্রমাণ করে, দেশ এখন শুধু উন্নয়নের দিকে নয়, ন্যায়ের দিকেও এগিয়ে যাচ্ছে।