উত্তর প্রদেশে বড় সাফল্য ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর, পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হলো এক ব্যবসায়ীকে। ব্যবসার মোড়কে বছরের পর বছর ধরে সীমান্তের ওপারে আইএসআইয়ের হয়ে কাজ করে যাচ্ছিল সে। এই ঘটনায় দেশজুড়ে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
রোববার (১৮ মে) ভারতের উত্তর প্রদেশের রামপুর জেলার বাসিন্দা শাহজাদ নামের এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে রাজ্যের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে পাকিস্তানের ber feared গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি ও সীমান্ত দিয়ে অবৈধ সামগ্রী পাচারে জড়িত ছিল।
ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, মোরাদাবাদে অভিযান চালিয়ে শাহজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে বলা হয়েছে, সে শুধুমাত্র মসলা, পোশাক, প্রসাধনী পণ্য পাচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং এই বৈধ ব্যবসার আড়ালে সে নিয়মিত পাকিস্তানে যাতায়াত করত, আইএসআইয়ের হয়ে গোপন মিশনে অংশ নিত।
ব্যবসার আড়ালে ভয়ংকর ষড়যন্ত্র:
এসটিএফ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, শাহজাদ বছরের পর বছর ধরে একাধিকবার পাকিস্তানে গিয়েছে। সে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত ব্যবহার করে প্রচুর পণ্য পাচার করেছে এবং এই কার্যক্রম আইএসআইয়ের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির একটি ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
এখানেই শেষ নয়—সংস্থাটির দাবি, শাহজাদ উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তরুণদের সংগ্রহ করে পাকিস্তানে পাঠাত, যারা আইএসআইয়ের হয়ে কাজ করত। এই প্রক্রিয়ায় সে একটি সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল। শুধু লোক পাঠানো নয়, শাহজাদ নিজে ভারতীয় সিম কার্ড এবং নগদ অর্থ সরবরাহ করত পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত গুপ্তচরদের হাতে।
ভারতে আইএসআই এজেন্টদের জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট:
শাহজাদ ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থানরত আইএসআই এজেন্টদের জন্য ‘লজিস্টিক সাপোর্ট’ প্রদান করত। এর মধ্যে ছিল মোবাইল সিম কার্ড, অর্থের যোগান, এবং নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা। এইভাবে সে নিজের ব্যবসার পর্দার আড়ালে বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছিল।
এসটিএফের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই নেটওয়ার্কে ভারতের আরও অনেক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে।
সম্প্রতি আরও ৬ জন গ্রেপ্তার:
শাহজাদের গ্রেপ্তারের ঠিক আগে, ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী আরও একটি অভিযান চালায় যেখানে এক ইউটিউবারসহ ছয়জনকে পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আটক করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই ঘটনার সাথেও শাহজাদের যোগাযোগ ছিল।
ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন সতর্কতা:
এই ঘটনার পর ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আরও বেশি সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ব্যবসার আড়ালে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করতে তৎপর হয়েছে তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনা শুধু একটি গ্রেপ্তারের বিষয় নয়, বরং ভারতের অভ্যন্তরে আইএসআইয়ের প্রভাব বিস্তারের একটি বড় প্রমাণ। তাই এখন দরকার রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একযোগে গোয়েন্দা তৎপরতা ও আইনি পদক্ষেপ।
শাহজাদের মতো ব্যবসার মুখোশ পরা গুপ্তচররা শুধু ভারতের জন্য নয়, দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্যই বড় হুমকি হয়ে উঠছে। এবার তার পর্দাফাঁস হলেও, তৎপর নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে দিতে হলে আরও গভীর তদন্ত ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।