কাশ্মীর সীমান্তে ফের উত্তেজনা, পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় নিহত হলেন ভারতীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাজ কুমার থাপ্পা। জম্মু ও কাশ্মীরের অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট ডেভেলপমেন্ট কমিশনার (ADDC) থাপ্পা শনিবার সকালে রাজৌরি শহরে পাকিস্তানি গোলার আঘাতে প্রাণ হারান।
জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ দেওয়া এক পোস্টে এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
তিনি লিখেছেন, “মাত্র গতকালই উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং আমি একটি ভার্চুয়াল সভায় এই কর্মকর্তার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, যেটি আমি সভাপতিত্ব করেছি। কিন্তু আজ পাকিস্তানের ছোড়া গোলা তার বাড়িতে আঘাত হানে। হামলাটি ছিল রাজৌরি শহরকে লক্ষ্য করে। এতে দুঃখজনকভাবে থাপ্পা নিহত হয়েছেন।”
এই হামলার প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি সম্ভবত ভারতের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানের শুরু করা নতুন সামরিক অভিযানের অংশ।
পাকিস্তান এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন বুনিয়ান-মারসুস’। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ দাবি করেছে, ভারত প্রথমে তাদের তিনটি বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ভারতের পাঠানকোট, উধমপুরসহ বেশ কিছু সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে।
এই টানাপোড়েনের মধ্যেই শনিবার ভোররাতে শ্রীনগর শহরে একের পর এক বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। শহরজুড়ে এখন চলছে ব্ল্যাকআউট। বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সেবা সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন এবং ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
এছাড়া ভারত ও পাকিস্তান—উভয় পক্ষই দাবি করছে, শুক্রবার দিবাগত রাতেই একে অপরের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ভারত বলছে, পাকিস্তান তাদের সামরিক ইনস্টলেশন লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, অপরদিকে পাকিস্তানের দাবি, ভারতই আগ্রাসন শুরু করে।
সীমান্ত অঞ্চলের পরিস্থিতি এখন চরম উত্তপ্ত। সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জরুরি বৈঠকে বসেছেন এবং সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সীমান্ত যুদ্ধেও রূপ নিতে পারে।
এদিকে থাপ্পার মৃত্যুর ঘটনায় ভারতের প্রশাসনিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি না দিলেও, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, “এই হামলার যথাযথ জবাব দেওয়া হবে। সীমান্তে আরও জবাবদিহিতামূলক অভিযান প্রস্তুত রয়েছে।”
কাশ্মীর উপত্যকায় প্রতিদিন যেভাবে উত্তেজনা বেড়ে চলেছে, তা শুধু ভারত-পাকিস্তান নয়, গোটা উপমহাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকেই অস্থিতিশীল করে তুলছে। আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
		
				
			


















