ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পাঞ্জাবে ফের ছায়াযুদ্ধের রক্তচিহ্ন—পাকিস্তান থেকে চালানো ড্রোন হামলায় ফিরোজপুর জেলায় একই পরিবারের তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজন নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
শনিবার (১০ মে) ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, শুক্রবার সন্ধ্যার পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতের আকাশসীমায় একাধিক ড্রোন পাঠানো হয়। এগুলোর মধ্যে অন্তত একটি ড্রোন পাঞ্জাবের ফিরোজপুর অঞ্চলে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে স্থানীয় এক পরিবারের তিন সদস্য আহত হন। আহতদের মধ্যে এক নারীর অবস্থা সংকটাপন্ন। বাকিদের শরীরে পুড়ে যাওয়ার মতো জখম রয়েছে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা এই পরিবারের চিকিৎসা চলছে ফিরোজপুরের একটি সরকারি হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসক কামাল বাগি বলেন, "তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একজন নারীর অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। অপর দুজনের শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। আমাদের চিকিৎসক দল সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।"
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা ভুপিন্দর সিং জানান, "ঘটনার পরপরই আমরা এলাকায় ছুটে যাই। ড্রোন হামলায় দগ্ধ তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পেছনে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।"
উত্তেজনার বিস্তার ও পটভূমি
এই হামলা এমন এক সময়ে ঘটলো যখন পাকিস্তান-ভারত সীমান্তজুড়ে চরম সামরিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় পর্যটকদের বহনকারী একটি বাসে হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করে। যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই উত্তেজনার জেরে ভারত মঙ্গলবার রাতে "অপারেশন সিঁদুর" নামে এক সামরিক অভিযানে নামে। ভারত দাবি করে, তারা পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে হামলা চালিয়েছে। ওই রাতেই পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস করার দাবি করে, যদিও ভারত এ দাবি মানতে নারাজ।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী এক বিবৃতিতে জানান, করাচি, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি সহ পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলের তৈরি ভারতের মোট ২৯টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে।
নতুন সামরিক অভিযান: অপারেশন 'বুনিয়ানুম মারসুস'
শনিবার (১০ মে) ভোরে পাকিস্তান নতুন আরেকটি সামরিক অভিযান শুরু করে, যার নাম দেওয়া হয় অপারেশন 'বুনিয়ানুম মারসুস'। এই অভিযানের আওতায় পাকিস্তানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের সামরিক স্থাপনাগুলোর দিকে ধেয়ে যায়। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, বেশিরভাগ হামলাই তারা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে তারা স্বীকার করে, একটি হামলায় লাহোরের একটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে।
যুদ্ধবিমান ধ্বংস: বাস্তবতা না কূটনৈতিক চাপ?
এদিকে, যুদ্ধবিমান ধ্বংসের বিষয়টি ঘিরে চলছে বিতর্ক। ভারত সরকারি পর্যায়ে এখনো কোনো যুদ্ধবিমান হারানোর কথা স্বীকার করেনি। তবে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের দুজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার দাবি, পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতের দুটি বিমান ভূপাতিত করেছে। তাদের মতে, এই বিমানগুলোর মধ্যে একটি ছিল ফ্রান্সের অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান।
ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনা এবং ড্রোন হামলার জবাবে পাল্টা অভিযান চালানোয় দুই দেশের মধ্যে যে সংঘাত চলছে, তা এক অনিবার্য বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সীমান্তের দুই পাশে বেসামরিক মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে, আর একইসাথে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের আচরণ নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।