close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

পাকিস্তানে পানি বন্ধ হলে ভারতের পানি বন্ধ করতে পারে চীন!

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি সাময়িক শান্তি আনলেও পানি ইস্যুতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভয়াবহ মোড় নিচ্ছে। পাকিস্তানি গবেষকদের মতে, ভারত যদি সিন্ধু চুক্তি ভেঙে পানি আটকে দেয়, তাহলে পাল্টা জবাবে চীনও..

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি এবং পানির নতুন যুদ্ধ

সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি অঘোষিত সীমান্ত সংঘাতের পর দুই দেশই যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। সাময়িকভাবে সামরিক উত্তেজনা প্রশমিত হলেও একটি নতুন সংকট সামনে এসেছে— পানি সংকট। বিশেষ করে ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি চুক্তি এখন টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। পাকিস্তানি বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ভারত যদি পানি বন্ধ করে দেয়, তবে এটি শুধু কৃষি নয়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকেও চরমভাবে হুমকির মুখে ফেলবে।

এই প্রসঙ্গে আলোচনার আয়োজন করেছিল পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (PIIA)। 'পাকিস্তান-ভারত সংঘাত' শীর্ষক ওই সেমিনারে উঠে এসেছে পানিকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহারের আশঙ্কাজনক দিকগুলো।

 পিআইআইএ’র সেমিনার: রাজনৈতিক চুক্তি থেকে জলসম্পদ যুদ্ধ

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন পিআইআইএ-এর চেয়ারপারসন ড. মাসুমা হাসান। তিনি বলেন, “ভারত কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে ২২ এপ্রিল পহেলগাম হামলার জন্য দায়ী করে। এরপর ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে। পাল্টা হিসেবে পাকিস্তান স্থগিত করে ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি।”

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকলে ৭ মে ভারত 'অপারেশন সিন্দুর' নামে একটি সামরিক অভিযান চালায়। পাকিস্তান ১০ মে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানায়। শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

পানি অস্ত্র হতে পারে: গবেষকদের সতর্কবার্তা

সেমিনারে ‘ওয়াটার অ্যাসেটস অ্যান্ড রিসোর্সেস’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা সহকারী মোহাম্মদ উসমান। তার বক্তব্য ছিল স্পষ্ট: “ভারত যদি পানি আটকে দেয়, তাহলে তাদের উচ্চ অববাহিকা অঞ্চলেই প্লাবনের ঝুঁকি তৈরি হবে। আর যদি শুষ্ক মৌসুমে পানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে পাকিস্তানের কৃষিক্ষেত্রে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “ভারতের এই পদক্ষেপ মোকাবেলায় পাকিস্তানের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো দরকার হবে, যার নির্মাণে সময় লাগবে বহু বছর।”

চীনের সম্ভাব্য পাল্টা চাল?

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, পাকিস্তানি গবেষকদের মতে, ভারত যেভাবে পাকিস্তানের পানির প্রবাহ আটকাতে পারে, তেমনি চীনও ভারতের পানি প্রবাহ থামাতে সক্ষম। কারণ ব্রহ্মপুত্র নদীর উচ্চ অববাহিকায় রয়েছে চীন, আর নিম্ন অববাহিকায় ভারত। চীন যদি হঠাৎ পানি আটকে দেয় কিংবা ছেড়ে দেয়, তাহলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা বা খরা দেখা দিতে পারে।

 রাজনৈতিক ব্যর্থতা না কি অভ্যন্তরীণ সংকটের চাপ?

সেমিনারের এক আলোচনায় উঠে আসে, “ভারত সম্ভবত নিজের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যাগুলো থেকে দৃষ্টি সরাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পানি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।” আরও বলা হয়, “যুদ্ধ কেবল সামরিক নয়, অর্থনীতি, কূটনীতি, ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার দিক থেকেও বড় মাত্রায় প্রভাব ফেলে।”

এক দর্শক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করে বলেন, “মোদি সম্ভবত পাকিস্তানে নতুন করে জাতীয় ঐক্যের আবহ তৈরি করে দিয়েছেন।”

 দ্রুত হাইড্রোপাওয়ার প্রকল্পে যাচ্ছে পাকিস্তান

এদিকে, ভারত পানি চুক্তি স্থগিত করতেই পাকিস্তান ঝুঁকছে বিকল্প ব্যবস্থার দিকে। এরই মধ্যে দেশটি ঘোষণা দিয়েছে, তারা ‘দ্রুত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ হবে না, কারণ প্রয়োজন টেকনিক্যাল সক্ষমতা, সময় এবং বিপুল অর্থায়ন।


 

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতা নতুন মাত্রা পেয়েছে জলযুদ্ধের আশঙ্কায়। একদিকে ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, অন্যদিকে চীনের সম্ভাব্য পাল্টা চাল—এই অঞ্চলকে নতুন এক নিরাপত্তাহীন পরিবেশে ঠেলে দিচ্ছে। পানির এই ভূরাজনীতি শুধু দুই দেশের জন্য নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই এক উদ্বেগের বার্তা।

No comments found