ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো উত্তেজনা—এবার এক ভারতীয় মন্ত্রী বললেন, ‘মোদিজি, আমাকে বোমা দিন! আমি পাকিস্তানে গিয়ে আত্মঘাতী হামলা করব।’
কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৬ জন। হামলার জন্য পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করছে ভারত। পাল্টাপাল্টি হুমকি, সীমান্তে গোলাগুলি ও কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন কর্ণাটক রাজ্যের আবাসন ও সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী জামির আহমেদ খান।
সম্প্রতি একটি সংবাদ সম্মেলনে জামির আহমেদ খান প্রকাশ্যে বলেন, ‘আমার শরীরে বোমা বেঁধে পাকিস্তানে গিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালাতে চাই। মোদি ও অমিত শাহ যদি অনুমতি দেন, আমি এই মুহূর্তে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।’ তাঁর এই বক্তব্যের ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
তিনি বলেন, “পাকিস্তান কখনোই আমাদের বন্ধু ছিল না। তারা আমাদের মাটি রক্তে ভিজিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যদি অনুমতি দেন, আমি বোমা বেঁধে পাকিস্তানে ঢুকে তাদের ঘাঁটি উড়িয়ে দেব।” এক পর্যায়ে তিনি সরাসরি বলেন, “মোদিজি, আমাকে আত্মঘাতী বোমা দিন।”
এই বক্তব্যের পর দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে জামির আহমেদ খানের মন্তব্যকে নাটকীয় বলে উড়িয়ে দেওয়া হলেও, অনেক কংগ্রেস সমর্থকই তাঁর দেশপ্রেমের প্রশংসা করছেন।
পেহেলগাম হামলার প্রেক্ষাপট:
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রাণ হারান ২৬ জন। এটি ছিল ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর সবচেয়ে বড় আঘাত। ভারত দাবি করছে, পাকিস্তানের মদতেই এই হামলা হয়েছে। এর জবাবে ভারত একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে—যেমন ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে, বন্ধ করেছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, এমনকি আকাশসীমাও সীমিত করেছে।
পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া:
ভারতের পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ পাকিস্তান সরকারও একইরকম কড়া জবাব দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেন, “পানির অধিকার নিয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা নিজেদের অধিকার রক্ষায় প্রস্তুত।” পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেন, “সিন্ধু দিয়ে যদি পানি না বইয়ে, তবে ভারতীয়দের রক্ত বইবে।”
এর পাশাপাশি, দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ ও রেলমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আব্বাসি বলেন, “পাকিস্তান প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্যও প্রস্তুত রয়েছে।”
ভারতের জবাব: মোদির কঠোর হুঁশিয়ারি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেও পেহেলগাম হামলা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসীদের এবং তাদের মদতদাতাদের এমন শাস্তি দেওয়া হবে যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। সময় এসেছে সন্ত্রাসের আশ্রয়স্থল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার।”
মোদির কথায় উঠে এসেছে ১৪০ কোটি ভারতীয়ের একতাবদ্ধ অবস্থানের বার্তা। তিনি বলেন, “এই জাতি আর কোনো সন্ত্রাস বরদাশত করবে না।”
জামির আহমেদের ঘোষণা: হঠাৎ আবেগ না কৌশল?
জামির আহমেদ খানের এই বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে। কেউ বলছেন, এটি একজন আবেগপ্রবণ দেশপ্রেমিক নেতার বক্তব্য, আবার কেউ বলছেন—এটি কংগ্রেসের তরফ থেকে বিজেপির জাতীয়তাবাদী অবস্থানকে টক্কর দেওয়ার রাজনৈতিক কৌশল।
তবে বিষয়টি নিশ্চিত যে, এমন প্রকাশ্য ‘আত্মঘাতী হামলার’ ঘোষণা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ-সদৃশ উত্তেজনার বার্তা আরও প্রবল করেছে। একদিকে যখন দুই দেশের সরকারই পারমাণবিক শক্তি নিয়ে হুমকি-ধমকিতে লিপ্ত, তখন এক মন্ত্রী নিজেকে আত্মঘাতী যোদ্ধা ঘোষণার ঘটনা নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে উপমহাদেশজুড়ে।
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা বরাবরই নতুন কিছু নয়। তবে পেহেলগাম হামলার পর যে হারে রাজনৈতিক উত্তেজনা, প্রতিক্রিয়া ও হুমকি-ধমকির ঝড় উঠেছে, তাতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও তলানিতে পৌঁছেছে। আর এর মধ্যে একজন রাজ্য মন্ত্রীর এমন ‘আত্মঘাতী বোমা’ বক্তব্য—এ যেন অগ্নিতে ঘি ঢালার মতো।
এই পরিস্থিতি সামলাতে এখন প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক সমাধান। তবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভাষ্যগুলো যদি এভাবেই আগুন ছড়াতে থাকে, তাহলে উপমহাদেশের জন্য ভবিষ্যৎ ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।



















