পাকিস্তান ও উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত জিসিসি (Gulf Cooperation Council) সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য ঘাটতি ১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। যদিও দেশটি জিসিসি সদস্যদের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) সম্পাদনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবুও আমদানির পরিমাণ রপ্তানির তুলনায় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাটতির পরিমাণ আরও বেড়েছে।
এই তথ্য উঠে এসেছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের (SBP) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১০.৯ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি সময়ে পাকিস্তানের জিসিসিভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানি ১৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.০৮ বিলিয়ন ডলারে। তবে একই সময়ে আমদানি ১৪ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ১৭.৫ বিলিয়ন ডলারে। এই বিপুল পরিমাণ আমদানির পেছনে অন্যতম কারণ—বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) থেকে তেলের আমদানির ব্যপক বৃদ্ধি।
জিসিসির ছয়টি সদস্য রাষ্ট্র হচ্ছে—সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE), কাতার, কুয়েত, ওমান ও বাহরাইন। এই দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম এখন প্রবল চ্যালেঞ্জের মুখে।
টপলাইন সিকিউরিটিজের গবেষণা পরিচালক শঙ্কর তালরেজা বলেন, “এই ঘাটতির বড় কারণ হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমদানির পরিমাণের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।” তিনি আরও জানান, ১১ মাসে শুধু ইউএই থেকে পাকিস্তানের আমদানি ৩২ শতাংশ বেড়ে গেছে, যার পরিমাণ প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার।
এ ছাড়াও, সামগ্রিকভাবে ইউএই থেকে আমদানি ৪৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮.৩৩ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ইউএইতে পাকিস্তানের রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩.৯৬ বিলিয়ন ডলার। অপরদিকে, সৌদি আরব থেকে আমদানি ১৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৪৭ বিলিয়ন ডলারে।
এই ঘাটতির পেছনে বড় একটি ভূমিকায় রয়েছে অপরিশোধিত তেলের দাম। বৈশ্বিক বাজারে তেলের দামে একাধিকবার ওঠানামা লক্ষ্য করা গেছে। ১৩ জুন, ইসরায়েল ও ইরানের সামরিক উত্তেজনার জেরে তেলের দাম একলাফে ১৩ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৭৭ ডলারে পৌঁছায়। যদিও ২৪ জুন যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর দাম কিছুটা কমে আসে—৬ শতাংশ হ্রাস পেয়ে।
তালরেজা আরও বলেন, "বর্তমানে অপরিশোধিত তেলের দাম গত বছরের জুলাই থেকে মে মাসের তুলনায় গড়ে ১০ শতাংশ কম। এর ফলে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পাকিস্তানের মোট পেট্রোলিয়াম আমদানির খরচ খুব একটা বাড়বে না। তবে ঝুঁকি এখনও থেকে যাচ্ছে।"
পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য এটি বড় সতর্কবার্তা। কারণ দেশটি জ্বালানি আমদানির জন্য এখনো ব্যাপকভাবে জিসিসি অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল। তেলের দামের ওঠানামা এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট — এই দুটি মিলে দেশটির অর্থনৈতিক ভারসাম্যকে ক্রমেই দুর্বল করে তুলছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় শুধু মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করলেই হবে না—প্রয়োজন রপ্তানি খাতকে শক্তিশালী করা এবং বিকল্প জ্বালানির উৎস খোঁজা। নতুবা বৈশ্বিক বাজারে সামান্য ওঠানামাই পাকিস্তানের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে।