চরম উত্তেজনার মধ্যেই মোদির সামনে কাশ্মীরের ছায়া: পাকিস্তানকে জবাব না দিলেই সংকটে সম্মান!
কাশ্মীরের মাটিতে আবারও রক্তের স্রোত। প্রাণঘাতী এক হামলায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারত। নয়াদিল্লি সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করলেও এখনো পর্যন্ত সামরিক কোনো জবাব দেয়নি দেশটি। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক বক্তব্যে ইঙ্গিত মিলেছে—এবার চুপ করে বসে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি সেনাবাহিনীকে ‘সম্পূর্ণ অভিযানিক স্বাধীনতা’ দিয়েছেন, যা সামরিক প্রতিশোধের সুনির্দিষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
পাকিস্তানের অবস্থান: অস্বীকার ও হুঁশিয়ারি
পাকিস্তান হামলার দায় অস্বীকার করে বলেছে, তারা যেকোনো ধরনের আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেবে। ইসলামাবাদ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনো উসকানি ছাড়বে না এবং ভারতীয় হামলা হলে কঠিন প্রতিক্রিয়া দেবে।
পুলওয়ামা স্মৃতি: পুরনো ক্ষত আবার তাজা
এই পরিস্থিতি অনেককেই ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে, যেখানে আত্মঘাতী এক বিস্ফোরণে নিহত হন ৪০ ভারতীয় সেনা। ওই ঘটনার মাত্র ১২ দিনের মাথায় ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। এবারও কি ঘটতে যাচ্ছে তেমনই কিছু?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৯ সালের ঘটনার পর দুই দেশের সম্পর্ক অনেকটাই স্থবির হয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপ সেসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখলেও বর্তমানে সে ধরনের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা খুবই কম।
দেশের ভেতরে মোদির ওপর চাপ
প্রধানমন্ত্রী মোদির ওপর এখন দেশের ভেতরে তীব্র চাপ—প্রতিশোধ চাইছেন জনগণ। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। রাজনৈতিক চাপ ও জনমতের তীব্র প্রতিক্রিয়া মোদিকে হয়তো আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে।
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি: চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কোথায়?
বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ভারত-পাকিস্তান সংকট এখন আর প্রথমসারির অগ্রাধিকার নয়। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন, গাজা ও ইরান নিয়ে ব্যস্ত। চীন এই সংকটে মধ্যস্থতাকারী হতে পারে, তবে দিল্লি চীনের নিরপেক্ষতাকে বিশ্বাস করে না কারণ ইসলামাবাদের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
সামরিক প্রস্তুতি ও অনিশ্চয়তা
ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই সীমান্তে সেনা প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ভারতের হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ভারত মনে করছে, বিশ্বজুড়ে তারা সহানুভূতি পাচ্ছে—এটাই হয়তো মোদিকে আগ্রাসী পথে ঠেলে দিচ্ছে।
পারমাণবিক ছায়া: বিশ্বের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি?
সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা হলো—এই উত্তেজনা পারমাণবিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে। দুই দেশই পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত। যদি এই উত্তেজনা যুদ্ধের রূপ নেয়, তবে তা গোটা দক্ষিণ এশিয়াকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
বিশ্লেষক কলিন ক্লার্ক বলেন, ‘দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সংঘর্ষ বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক নিরাপত্তা সংকট হতে পারে।’ ইউক্রেন যুদ্ধ, রাশিয়ার পারমাণবিক হুমকি, ও বৈশ্বিক অস্থিরতা এই পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
‘যুদ্ধের কুয়াশা’র ভয়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিনের শত্রুদের মাঝে উত্তেজনা যখন তুঙ্গে ওঠে, তখন ছোট সিদ্ধান্তগুলোও বড় সংঘর্ষে পরিণত হতে পারে। এই মুহূর্তে পারমাণবিক উত্তেজনার ভারসাম্য চূড়ান্তভাবে হুমকির মুখে।
সিদ্ধান্তের দায় মোদির কাঁধে
মোদির সামনে এখন দুটো পথ—একদিকে সামরিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্ত অবস্থান দেখানো, অন্যদিকে কূটনৈতিকভাবে পরিস্থিতি সামলানো। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ চাপ ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টি থাকায় তার প্রতিটি সিদ্ধান্ত বিশ্ব রাজনীতির দিক পরিবর্তন করতে পারে।
কাশ্মীর হামলা যেন শুধু একটি সন্ত্রাসী হামলা নয়, বরং একটি পারমাণবিক দ্বন্দ্বের শুরু হতে পারে। ভারতের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে, উপমহাদেশ শান্তির পথে যাবে নাকি এক অনিবার্য ধ্বংসযুদ্ধের দিকে এগোবে। মোদির সামনে এখন সময়ের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			