পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে ব্রিটিশ আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে : প্রধান উপদেষ্টা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
হাসিনা সরকারের সময় বিদেশে পাচার হওয়া ২৩৪ বিলিয়ন ডলার উদ্ধারে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। ব্রিটেনে অর্থ ফেরাতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অভিজ্ঞ ব্রিটিশ আইনজীবী। প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের সঙ্গে সাক..

ব্রিটেনে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধারে আইনি লড়াই শুরু করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এই লক্ষ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যুক্তরাজ্যের এক প্রখ্যাত আইনজীবীকে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য সরকার এই পদক্ষেপে সক্রিয় সহযোগিতা করছে, এবং অর্থ উদ্ধারে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে তারা উৎসাহী এবং সহানুভূতিশীল। ইউনূস বলেন, "আমি সত্যিই অবাক হয়েছি ব্রিটিশ প্রশাসনের এই দ্রুততা দেখে। এটা আশাব্যঞ্জক।"

এই বিষয়টি উঠে আসে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে। বিবিসি জানায়, আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা International Specialised Corruption Coordination Centre (ISCCC) ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং যুক্তরাজ্যের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করছে।

বিশেষত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগ এবং সেই টাকাগুলো বিদেশে পাচারের বিষয়েই মূলত অনুসন্ধান চলছে।

বাংলাদেশি গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে জানানো হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২4 সালের মধ্যে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার (১৭৪ বিলিয়ন পাউন্ড) পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বড় একটি অংশ যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ, বিলাসবহুল জীবনযাপন ও ব্যবসার আড়ালে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের জাতীয় অপরাধ দমন সংস্থা (NCA) লন্ডনে ISCCC-কে একটি যৌথ সভার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। যদিও এনসিএর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করা হয়নি।

এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, “আন্তর্জাতিক সহায়তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আমরা প্রকাশ্যে মন্তব্য করি না। যদি কোনো তদন্ত চলমান থাকে বা কোনো সহযোগিতার অনুরোধ আসে, তাও আমরা জনসমক্ষে জানাই না।”

অপরদিকে, অধ্যাপক ইউনূস সম্প্রতি সফরে ব্রিটিশ রাজা চার্লসের সঙ্গে বাকিংহাম প্যালেসে এক বৈঠকে মিলিত হন। এ ছাড়া তিনি দেশটির বাণিজ্য সচিব জনাথন রেনল্ডস এর সঙ্গেও দীর্ঘ আলোচনায় বসেন। জনাথন রেনল্ডস এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট দিয়ে জানান, তাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিলো “পারস্পরিক সহযোগিতায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন”।

তবে, উল্লেখযোগ্যভাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়নি। ইউনূস বলেন, “আমি জানি না এতে আমার হতাশ হওয়া উচিত, নাকি দুঃখিত হওয়া উচিত। এটা নিঃসন্দেহে একটি হারিয়ে যাওয়া সুযোগ।”

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা পাইনি। সম্ভবত তিনি অন্য কোনো জরুরি কাজে ব্যস্ত ছিলেন।”

তবে বিশ্লেষকদের মতে, ইউনূসের এই সফর ছিলো রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের পেছনে কেবল আর্থিক নয়, কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবেও এই কার্যক্রমকে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও আইনি ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এতে একদিকে যেমন বিদেশে বসবাসরত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বার্তা যাবে, অন্যদিকে অর্থনীতিও কিছুটা স্বস্তি পাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

Ingen kommentarer fundet