ইবি প্রতিনিধি:
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী ওসমান হাদীর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া মোড় থেকে মিছিলটি বের করে তারা। মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।
মিছিলে ‘যে ভারত খুনি পালে, সেই ভারত ভেঙে দাও'; 'যে ভারত হাসিনা পালে, সেই ভারত ভেঙে দাও'; 'বাবরের পথ ধরো, সেভেন সিস্টার স্বাধীন করো'; ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ'; ‘খুন হয়েছে হাদী ভাই, ঘরে থাকার সময় নাই'; ‘আমার সোনার বাংলায়, সন্ত্রাসীদের ঠাঁই নাই'; ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার'; ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা'; 'দল শিবির জনতা, গড়ে তোল একতা'; ‘জামাত-বিএনপি জনতা, গড়ে তোল একতা'; 'ওসমান হাদীর কারণে, ভয় করি না মরণে'; ‘লীগ ধর, জেলে ভর'; ‘সন্ত্রাসীরা দেখে যা, রাজপথে তোর বাপেরা'; ‘হাদী ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না'সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা দ্রুত খুনিদের গ্রেফতার, বিচারিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিতকরণ ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পুনর্গঠনের দাবি জানান।
বিক্ষোভে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক এস এম সুইট, ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ গালিবসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী ও পাঁচ শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বক্তব্যে ইবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ইউসুব আলী বলেন, "হাদি ভাইয়ের হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত করা হয়েছে। যারা আধিপত্যবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের কবর রচনা না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার না করলে আন্দোলন আরও কঠোর হবে। যদি হাদি ভাইয়ের হত্যার বিচার না হয়, তাহলে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ একত্রিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। আমরা আর কোনো হাদি ভাইকে হারাতে চাই না।”
ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন বলেন, “হাদি ভাই ছিলেন স্বচ্ছ, দেশপ্রেমিক ও ন্যায়পরায়ণ নেতা। তিনি ছিলেন ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক নির্ভীক কণ্ঠস্বর। তার রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ সমগ্র ছাত্রজনতা রাজপথে থেকে হাদি ভাইয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নে লড়াই চালিয়ে যাবে। যারা আজও সেই ফ্যাসিস্টদের প্রেতাত্মাকে লালন করছে, তাদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমরা হাদি ভাইয়ের রক্তের সাথে কোনোদিন বেইমানি করব না।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক এস এম সুইট বলেন, “হাদী ভাইয়ের হত্যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের কণ্ঠরোধের চেষ্টা। খুনিরা কীভাবে ভারতে পালিয়ে গেল, এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা। রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভেতরে দুর্বলতা আছে, যা এখনই সংস্কার করা জরুরি।”
প্রসঙ্গত, ওসমান হাদীর হত্যার প্রতিবাদে রাত ১২টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই-৩৬ ও খালেদা জিয়া হল থেকে শতাধিক ছাত্রী মিছিল নিয়ে বের হন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান হাদি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।



















