বাংলাদেশের রাজনীতিতে চলমান উত্তাপ ও অনিশ্চয়তার মাঝে জামাতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এসেছে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান একেবারে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন—অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বাড়ানোর কোনো প্রস্তাবে জামাতে ইসলামী একচুলও সমর্থন দেবে না।
শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় চা শ্রমিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে, যেমন করিডোর বা বন্দর ব্যবহারের মতো গুরুতর সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র একটি নির্বাচিত ও বৈধ সরকারের মাধ্যমেই নেওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না এবং নেওয়াও উচিত নয়।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বাড়ানোর পেছনে যে চাপ বা চক্রান্তই থাকুক না কেন, তা দেশের সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও সংবিধানবিরোধী। জামাত এ বিষয়ে কোনো সমর্থন দেবে না।”
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। “প্রধান উপদেষ্টা যে সময়সীমা দিয়েছেন, তাতে ২৬ জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব,”—তিনি মন্তব্য করেন।
তার মতে, নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো পথ গ্রহণযোগ্য নয়। “জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করার চিন্তা দেশের স্বার্থবিরোধী এবং গণতন্ত্র ধ্বংসের ষড়যন্ত্র,” বলেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “দেশের স্বার্থ যেখানে বিকৃত হয়, জামাতে ইসলামী সেখানে ‘না’ বলতেই প্রস্তুত। আমরা কখনোই এমন কোনো প্রক্রিয়ার সঙ্গে একাত্ম হই না, যা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের আস্থার বিরুদ্ধে যায়।”
সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও সময় বাড়ানোর গুঞ্জনের মধ্যেই জামাত আমিরের এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি একদিকে যেমন সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে, তেমনি জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিরোধী দলগুলোর সম্মিলিত অবস্থানের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে।
উল্লেখ্য, জামাতে ইসলামী বর্তমানে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং নির্বাচন ঘিরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট—তারা একটি নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজি নয়।
এছাড়া, মতবিনিময় সভায় চা শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন জামাত আমির এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করার আশ্বাস দেন।



















