বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট ও আগামী নির্বাচন ঘিরে নানা বিতর্কের মধ্যে নতুন করে আলোচনায় এলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। রবিবার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য দেন এবং তীব্র ভাষায় বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “একটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত নিরপেক্ষতা। অথচ কিছু উপদেষ্টা নিজেদের দায়িত্ব ভুলে গিয়ে নির্দিষ্ট দলের পক্ষ নিয়ে কাজ করছেন। এটি শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয়, দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ।”
রিজভী আরও বলেন, “যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনও দলকে প্রতিষ্ঠিত বা পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করে, তাহলে দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না। জনগণ আজ অনেক সচেতন, তারা জানে কে তাদের জন্য কাজ করে আর কে নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “বিভিন্ন উপদেষ্টা, যাদের দায়িত্ব ছিল সার্বিক প্রক্রিয়া পরিচালনায় সহায়তা করা, তারা এখন নিজেদের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও নীরবে বসে আছে, সুযোগ পেলেই তারা আবার আঘাত হানবে। তাই এই সময়ে জনগণের ওপর বিশ্বাস রেখে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।”
নজরুল প্রসঙ্গেও ব্যক্ত করেন গভীর শ্রদ্ধা
শুধু রাজনৈতিক বার্তা নয়, রিজভীর কণ্ঠে উঠে আসে কবি নজরুল ইসলামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধও। তিনি বলেন, “নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা যুগে যুগে আমাদের প্রেরণা দিয়েছে। বিগত আন্দোলনগুলোতে আমরা তাঁর সাহিত্য ও সংগ্রামী জীবনের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করেছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “নজরুল ছিলেন শৃঙ্খলমুক্তির কবি। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে তার শিক্ষা আমাদের তাগিদ দেয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। শত আঘাতেও নজরুল আমাদের শেখান কীভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হয়।”
রিজভীর বক্তব্যে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে—দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাংবিধানিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বিএনপির গভীর উদ্বেগ। একদিকে যেমন তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, অন্যদিকে নজরুলের চেতনা ও লেখনীর আলোকে রাজনৈতিক আন্দোলনের অনুপ্রেরণাও তুলে ধরেছেন।
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথে ইঙ্গিত
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রিজভী বলেন, “আমরা সবসময় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। তবে যদি কেউ জনগণের অধিকার হরণ করতে চায়, তাহলে আমরা প্রতিরোধ গড়েই তুলব। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে জনগণ, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী নয়।”
উপসংহার
রিজভীর বক্তব্যে একদিকে যেমন ছিলো তীব্র রাজনৈতিক বার্তা, অন্যদিকে ছিলো সাহিত্যের প্রতিও অগাধ শ্রদ্ধা। নজরুলের জন্মজয়ন্তীর দিন এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে—বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়ে।
নজরুলের বিদ্রোহী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিএনপি আগামী দিনে কী কৌশল গ্রহণ করবে—তা নিয়ে এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আগ্রহও বাড়ছে। একথা বলাই যায়, রিজভীর এই মন্তব্য শুধু একটি বক্তব্য নয়, বরং এটি একটি শক্ত রাজনৈতিক বার্তা।