close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

অযত্নে-অবহেলায় নিশ্চিহ্ন হচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের শতবর্ষী জমিদারবাড়ি..

ফরহাদ হোসেন avatar   
ফরহাদ হোসেন
অযত্নে-অবহেলায় নিশ্চিহ্ন হচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের শতবর্ষী জমিদারবাড়ি..

ফরহাদ হোসেন, | মিরসরাই, চট্টগ্রাম | ২৯ মে ২০২৫:

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি জমিদারবাড়ি। এক সময়ের প্রভাবশালী জমিদার শেখ ওয়াসিল চৌধুরীর এই ঐতিহাসিক বাড়িটি এখন অযত্ন, অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।

 

ভবনটি দ্বিতীয় তলার একটি বিশাল অট্টালিকা, যার গায়ে জমিদারির ইতিহাসের ছাপ স্পষ্ট। দূর থেকে দেখলে এটি এক মনোরম বাগানবাড়ি বলেই মনে হবে। কিন্তু কাছে গেলে চোখে পড়ে একটি জীর্ণপ্রায় পুরনো ভবনের করুণ চিত্র—দরজা-জানালার ফ্রেম আছে, কিন্তু কপাট নেই। ভেতরে ঝোপঝাড়ে ছেয়ে গেছে প্রতিটি ঘর। ইটের দেওয়ালে জন্মেছে আগাছা, ছাদে লটকে আছে পুরনো গার্ডার। একসময়ের আলোকোজ্জ্বল প্রাসাদ এখন যেন ভূতের বাড়ি।

 

স্থানীয়রা জানান, এই জমিদারবাড়ির নির্মাণকাজ শুরু হয় অষ্টাদশ শতকের আগে। এর স্থাপত্যশৈলীতে ব্যবহৃত হয়েছে ইট, সুরকি, লোহার রড ও গার্ডার। প্রতিটি কক্ষ ও ছাদে রয়েছে প্রাচীন শৈলীর নিদর্শন, যা বাংলার ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের অনন্য দৃষ্টান্ত।

এলাকার প্রবীণরা জানান, জমিদার শেখ ওয়াসিল চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র ওলি আহমেদ ও মকবুল আহমেদ জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বিভক্তি শুরু হলে জমিদারির পতন শুরু হয়। ঐতিহ্য হারিয়ে জমিদার বাড়িটি হয়ে পড়ে পরিত্যক্ত।

জানা গেছে, এ জমিদার পরিবার ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছিল। পরিবারের সবচেয়ে খ্যাতনামা জমিদার ছিলেন নুরুল আবছার চৌধুরী, যিনি ১৮৯৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র অল্প বয়সেই জমিদারির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তিনি। সৎ ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এই জমিদার খুব অল্প সময়েই প্রজাদের হৃদয়ে জায়গা করে নেন।

 

নুরুল আবছার চৌধুরীর অনেক জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের কথাও জানান এলাকাবাসী। তার মায়ের নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিজের নামে একটি উচ্চ বিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠা করেন শান্তিরহাট বাজার। সেই সঙ্গে তিনি গড়েছিলেন বহু এতিমখানা। রাজনীতির সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি এবং শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

তবে, দুঃখজনকভাবে এত সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অধিকারী এ জমিদারবাড়িটির প্রতি নেই কোনো সরকারি বা বেসরকারি রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা। নেই কোনো প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নজরদারি। ফলে অমূল্য এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

এলাকার সচেতন মহল ও ইতিহাসপ্রেমীরা দাবি করছেন, অবিলম্বে জমিদারবাড়িটি সংরক্ষণে উদ্যোগ নিতে হবে। এটি শুধু একটি পরিবার বা এলাকার গর্ব নয়, বরং বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

 

 

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি


News Card Generator