চাঁদপুরের মতলবে সাবেক প্রেমিকের ছোড়া অ্যাসিডে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন গৃহবধূ মিলি আক্তার। এই নির্মম ঘটনার পেছনের গল্প এবং দোষীদের শাস্তির দাবি নিয়ে সরব হয়েছেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার পশ্চিম সুজাতপুর গ্রামের বাসিন্দা মিলি আক্তার (২৫) গত ১০ মাস ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ঘটনার পেছনের নির্মম গল্প
মিলি আক্তারের সঙ্গে মমরুজকান্দি গ্রামের সফিকুল ইসলাম মানিকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে মিলির অন্যত্র বিয়ে হলে মানিক সেই সম্পর্ক ভুলতে পারেনি। বিয়ের পর, মিলির স্বামী প্রবাসে থাকায় তিনি বাবার বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন।
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে মানিক ও তার সহযোগী জাহিদ, পরিকল্পিতভাবে মিলির ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করে। এতে তার মুখ, বুক, পিঠ, ও হাত ঝলসে যায়। এ হামলার সময় মিলির মা রাশেদা বেগমকেও আঘাত করা হয়, যার ফলে তার হাত ও উরুও মারাত্মকভাবে পুড়ে যায়।
চিকিৎসার দীর্ঘ লড়াই
প্রথমে মিলি ও তার মাকে মতলব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়, যেখানে দীর্ঘ ১০ মাস লড়াইয়ের পর তিনি মারা যান।
দোষীদের গ্রেপ্তার ও স্বীকারোক্তি
এ ঘটনায় মিলির বাবা আইয়ুব আলী বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় মামলা করেন। পুলিশ সফিকুল ইসলাম মানিক ও জাহিদকে গ্রেপ্তার করে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেয় এবং অ্যাসিড নিক্ষেপের পরিকল্পনার সত্যতা স্বীকার করে।
পরিবারের আর্তনাদ: ফাঁসির দাবি
মিলির বাবা আইয়ুব আলী বলেন, “যারা আমার মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, আমি তাদের ফাঁসি চাই।”
মায়ের লড়াই ও সন্তানের ভবিষ্যৎ
মিলি আক্তারের একটি সাত মাসের শিশু রয়েছে। এই শিশুর ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নবিদ্ধ। মা রাশেদা বেগমের শরীরেও ঘটনার ভয়াবহ দাগ রয়ে গেছে।
অ্যাসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান
এই ঘটনা অ্যাসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তাকে আরও সামনে এনেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
শেষকথা
মিলির নির্মম মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সমাজে অ্যাসিড সন্ত্রাস এখনো কিভাবে নির্মমতার নজির সৃষ্টি করছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক।
کوئی تبصرہ نہیں ملا