এ বিষয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা সংস্থার গোপন সূত্রে জানা গেছে, হোয়াইট হাউস সরাসরি ইরানকে লক্ষ্য করে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ কৌশল তৈরি করছে। বিশেষ করে ইরানের সামরিক পরিকাঠামো ও পরমাণু স্থাপনাগুলো এই হামলার মূল লক্ষ্য হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর অন্দরের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গ জানায়, “ওয়াশিংটন সরাসরি তেহরানের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়ানোর পথ তৈরি করছে।” এমনকি ফেডারেল পর্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষ নেতারাও ইতিমধ্যেই হামলার প্রস্তুতির নির্দেশ পেয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ কেবল ইরানকেই নয়, বরং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে একটি ভয়াবহ যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে। এই হামলার প্রস্তুতির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই তেলবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধ পরিকল্পনা এতটাই গোপনে এগিয়েছে যে মার্কিন প্রশাসনের অভ্যন্তরের কিছু কর্মকর্তা ধারণা করছেন, ‘এই সপ্তাহের শেষের দিকেই ইরানের ওপর আঘাত হানতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।’ যদিও বিষয়টি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়নি, তবে যুদ্ধ বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতির গতি যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে হামলার সম্ভাবনা অত্যন্ত বাস্তব।
অজ্ঞাত সূত্রের বরাতে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এই মুহূর্তে যুদ্ধ শুধুই সময়ের ব্যাপার। ওয়াশিংটনের কৌশলগত নীরবতাই বলে দিচ্ছে, তারা প্রস্তুত।”
ইরানের ওপর এই সম্ভাব্য হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তেহরানেও কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী ও বিপ্লবী গার্ড (IRGC) তাদের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর উপরও নজরদারি বাড়িয়েছে দেশটি।
বিশ্ব রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যের ভঙ্গুর স্থিতিশীলতা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে। ইতোমধ্যেই সৌদি আরব, ইসরায়েল ও আরব আমিরাত পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে।
জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশও যুদ্ধের পরিবর্তে সংলাপের পথ বেছে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র আপাতত কূটনৈতিক সমাধানের পথে আগ্রহী নয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার উত্তেজনা নতুন নয়, তবে এবারের প্রস্তুতি যেন একেবারে চূড়ান্ত যুদ্ধের ইঙ্গিত। এখন দেখার বিষয়, ওয়াশিংটনের এই যুদ্ধনীতি কি সত্যিই বাস্তবে রূপ নেবে, নাকি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আবারও পিছিয়ে আসবে মার্কিন প্রশাসন।