অধ্যাপক ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’, বিবিসিকে নাহিদ ইসলাম..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা নাহিদ ইসলাম জানালেন, অধ্যাপক ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’। রাজনৈতিক চাপ, আন্দোলন ও ‘জিম্মি পরিস্থিতি’তে কাজ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব বলে মনে করছেন ..

অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের আভাস: অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ কি অনিশ্চয়তার দিকে?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম উত্তেজনার মধ্যে এক বিস্ফোরক ইঙ্গিত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর পদত্যাগ নিয়ে যে গুঞ্জন সকাল থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছিল, তা কার্যত সত্যে রূপ নিতে চলেছে—এমনটাই আভাস দিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

২২ মে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসেন নাহিদ ইসলাম। বৈঠক শেষে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। আজ সকাল থেকেই অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের বিষয়ে খবর শুনছি। সেই কারণেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”

নাহিদের ভাষ্য অনুযায়ী, অধ্যাপক ইউনূস সরাসরি বলেছেন, “আমি যদি কাজ করতে না পারি, তবে এই দায়িত্বে থাকার অর্থ কী? আমাকে এমন একটি জায়গা থেকে ডাকা হয়েছিল, যেখানে দেশের সংস্কার ও পরিবর্তনের আশা ছিল। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে—যেভাবে আন্দোলন হচ্ছে, যেভাবে আমাকে জিম্মি করে ফেলা হয়েছে—এই অবস্থায় আমার পক্ষে কাজ করা সম্ভব না।”

তিনি ভাবছেন”—নাহিদের মুখে প্রধান উপদেষ্টার দুঃখ

নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট করে বলেন, “স্যার জানিয়েছেন তিনি ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’। তিনি মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে তাঁর পক্ষে কাজ করে যাওয়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দলগুলো যদি তাঁর ওপর আস্থা না রাখে, আশ্বাস না দেয়—তবে তিনি থেকে কী লাভ?”

এই বক্তব্যেই স্পষ্ট, অধ্যাপক ইউনূস দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রবল হতাশ। বিশেষ করে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যখন রাজনৈতিক চাপ ও আন্দোলনের সামনে অস্পষ্ট হয়ে পড়ছে, তখন প্রধান উপদেষ্টার মনোবলও ভেঙে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নাহিদের অনুরোধ: “স্যার, শক্ত থাকুন!

প্রধান উপদেষ্টাকে এমন সিদ্ধান্ত না নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা। নাহিদের ভাষ্য, “আমরা তাঁকে বলেছি, দেশের নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ এবং সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা সবকিছুকে সামনে রেখে যেন তিনি শক্ত থাকেন। সবাইকে নিয়ে ঐক্যের জায়গায় যেন থাকেন। আমরা আশা করি, সব রাজনৈতিক দল তাঁর সঙ্গে সহযোগিতা করবে।”

তবে এত অনুরোধের পরেও অধ্যাপক ইউনূসের সুর ছিল হতাশামিশ্রিত। নাহিদের ভাষায়, “তিনি বলছেন, ‘হ্যাঁ, ভাবছি।’ এখন যদি রাজনৈতিক দলগুলো তাঁর পদত্যাগ চায়, তাহলে তিনি আর থাকবেন কেন?”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অধ্যাপক ইউনূসের এই সংকেত দেশের রাজনীতিতে নতুন মোড় আনতে পারে। তিনি পদত্যাগ করলে অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, যা পরবর্তীতে জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক সমঝোতার পথ রুদ্ধ করতে পারে।

অনিশ্চয়তার ছায়া

অধ্যাপক ইউনূসের ‘পদত্যাগ ভাবনা’ একদিকে যেমন দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলছে, অন্যদিকে এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে—সক্ষমতা, আস্থা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবেই হয়তো ভেঙে পড়তে চলেছে একটি সম্ভাবনাময় সরকার কাঠামো।

এখন নজর থাকবে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর—তারা কি অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি আস্থা ও সমর্থন দেখাবে? নাকি এই সংকট আরও গভীর হবে?

No se encontraron comentarios