বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ এক ঐতিহাসিক দিন। দেশের সবচেয়ে পুরনো এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে অবশেষে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণার পরপরই দেশজুড়ে ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মানুষ উল্লাসে মেতে ওঠে। শাহবাগ, টিএসসি, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা শহর, রংপুর এবং ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন অঞ্চলে জনতার ঢল নামে।
সরকারি গেজেটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত’ ও ‘গণতন্ত্রবিরোধী পদক্ষেপের’ অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিগত এক দশকে দলটির বিরুদ্ধে গণতন্ত্র হরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভোট কারচুপি, প্রশাসনের অপব্যবহার, দুর্নীতি, রাজনৈতিক নিপীড়ন, এবং বিরোধী মত দমনসহ বহু অভিযোগ জমা পড়েছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে।
ছাত্র আন্দোলনের জয়
বিশেষ করে বিগত কয়েক মাস ধরে চলমান ছাত্র আন্দোলন, যেখানে “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করো”—এই স্লোগান ছিল কেন্দ্রবিন্দুতে, সেই আন্দোলনের প্রভাবকেই মূল চালিকা শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ছাত্র সমাজের বিভিন্ন ফোরাম, যেমন “জনতার সংঘ”, “গণআন্দোলন পরিষদ” এবং “নির্বাচন পুনরুদ্ধার ছাত্রজোট”-এর সংগঠিত আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল।
শাহবাগে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ আনন্দ মিছিল করে। কেউ কেউ মিষ্টি বিতরণ করে, কেউ আবার জাতীয় পতাকা উড়িয়ে জয় বাংলা স্লোগান দেয়—তবে এবার সেই ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের অর্থ ভিন্ন, এখন তা হয়ে উঠেছে ‘গণতন্ত্রের জয়’।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিএনপি, জামায়াত, গণতন্ত্র মঞ্চ, ন্যাশনালিস্ট কনজারভেটিভ পার্টি (NCP) সহ প্রায় সব বিরোধী দল এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। বিএনপির মহাসচিব এক বিবৃতিতে বলেন, “গণতন্ত্রকে যারা কবর দিতে চেয়েছিল, আজ তারাই ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে।”
অপরদিকে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা এই সিদ্ধান্তকে “অবৈধ ও প্রতিহিংসাপরায়ণ” বলে দাবি করেছেন। তারা বলছেন, এটি একটি গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং তারা আইনগত লড়াইয়ের মাধ্যমে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক মহল এই সিদ্ধান্তকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক প্রতিনিধি বলেছেন, “গণতন্ত্র রক্ষার নামে যদি আরেকটি স্বৈরশাসনের জন্ম হয়, তবে সেটি হবে আরও বিপজ্জনক।”
ভবিষ্যতের রাজনীতি কোথায়?
বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ হওয়া মানে শুধুই একটি দলের পতন নয়, এটি একটি দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অবসান। বাংলাদেশে রাজনীতির একটি নতুন অধ্যায় শুরু হলো যেখানে নতুন দল, নতুন আদর্শ এবং নতুন নেতৃত্ব উঠে আসতে পারে।
তবে এই মুহূর্তে জনমনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—এই শূন্যতা কে পূরণ করবে? আওয়ামী লীগের অবসানের পর কীভাবে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে? আগামী নির্বাচনে কারা অংশ নেবে?
আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ হওয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি যুগান্তকারী অধ্যায় শুরু করল। যদিও অনেকে এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছে, তবে ভবিষ্যতে এর প্রভাব কতটা গভীর হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আজ, ১০ মে—এটি ইতিহাস হয়ে থাকবে।