অভিযুক্ত নয়, আমি প্রতিবাদী – বললেন বোতল নিক্ষেপকারী শিক্ষার্থী ইশতিয়াক
রাজধানীর কাকরাইল। দিনটি ছিল উত্তাল, মুহূর্তে মুহূর্তে বদলাচ্ছিল দৃশ্যপট। যমুনা ভবনের পথে সরকারি গাড়িবহর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অবস্থান কর্মসূচি। ত্রিমুখী চাপের মধ্যে সেদিন উপস্থিত হন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। উদ্দেশ্য ছিল সরেজমিনে আন্দোলনকারীদের কথা শোনা, সমাধানের খোঁজে আলোচনা। কিন্তু হঠাৎই ঘটে এমন এক ঘটনা, যা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে রাতারাতি।
একটি পানির বোতল ছুঁড়ে মারা হয় উপদেষ্টার দিকে। মুহূর্তেই ক্যামেরায় ধরা পড়ে সেই দৃশ্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় ভিডিওটি। মানুষের মনে প্রশ্ন—কে এই ব্যক্তি? কেন এমন করলেন? উদ্দেশ্য কি শুধুই প্রতিবাদ, নাকি ছিল রাজনৈতিক অভিসন্ধি?
ঘটনাস্থলে উত্তেজনা, আর মিডিয়ার সামনে আত্মপক্ষ সমর্থনে সেই ছাত্র
ভিডিও বিশ্লেষণে বোঝা যায়, বোতলটি ছুঁড়ে দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইশতিয়াক হুসাইন। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক সাধারণ পরিবারের সন্তান এই শিক্ষার্থী আজ রাতারাতি পরিচিত হয়ে উঠেছেন একটি মাত্র কাজে—একটি পানির বোতল ছোড়া।
তবে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ইশতিয়াক জানান এক ভিন্ন কাহিনি। তিনি বলেন—
“ঘটনাটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। আমি কাউকে আঘাত করার জন্য বোতল ছুঁড়িনি। উত্তেজনার মধ্যে আকাশের দিকে ছুড়ে মেরেছিলাম। সেটি ভুল করে সামনে চলে যায়।”
তিনি দাবি করেন, কারো প্রতি বিদ্বেষ বা অপমানের উদ্দেশ্য তার ছিল না। বরং ঘটনাটি হঠাৎ করে ঘটে গেছে আন্দোলনের চাপে।
"আমি কোনো ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না" — গুজবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ইশতিয়াক
ঘটনার পর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে জল্পনা। কেউ বলছেন তিনি ছাত্রলীগের লোক, কেউ বলছেন শিবিরের সদস্য, আবার কেউ দাবি করছেন, তিনি নাকি কোনো গোপন রাজনৈতিক দলের ‘প্রক্সি’ হিসেবে কাজ করছেন।
এই অভিযোগকে একেবারে নাকচ করে দিয়ে ইশতিয়াক বলেন—
“আমি কোনো ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না। আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। বরং গত জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণেই পুলিশ আমাকে মারধর করেছিল।”
তিনি আরও জানান, পড়াশোনা চালাতে তাকে টিউশন এবং পার্ট টাইম চাকরি করতে হয়। রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার মতো সময় বা আগ্রহ কোনোটাই তার নেই।
হুমকি, ভয় এবং মানসিক চাপ—ইশতিয়াকের বর্তমান বাস্তবতা
ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন অচেনা নম্বর থেকে ফোন পাচ্ছেন ইশতিয়াক। কেউ হুমকি দিচ্ছে, কেউ সরাসরি ক্যাম্পাসে হামলার ভয় দেখাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন এই তরুণ শিক্ষার্থী।
“অনেকেই বলছে, ক্যাম্পাসে গেলে আমাকে ঘিরে মব তৈরি করে হেনস্তা করবে। এই ভয়ে এখন নিজেকে গুটিয়ে রেখেছি।”
সত্যিই কি একটি বোতল আন্দোলনের অভিমুখ বদলে দিতে পারে? নাকি সেটিই ছিল ক্ষমতার বিপরীতে এক প্রতীকী প্রতিবাদ? আজ সেই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে সর্বত্র।
প্রশ্ন অনেক, উত্তর অজানা — তবে ঘটনা বদলে দিয়েছে আন্দোলনের গতি
এই ঘটনার পর আন্দোলনের ধরণে দেখা দিয়েছে ভিন্নতা। একদিকে নেতৃত্বের প্রতি প্রশ্ন, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্বে ভয়ের ছাপ। কেউ বলছেন, এটি ছিল পরিকল্পিত উস্কানি, কেউ বলছেন হতাশা থেকে উদ্ভূত প্রতিক্রিয়া।
তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—এই এক বোতলই বদলে দিয়েছে অনেক কিছু। বদলে দিয়েছে কাকরাইলের রাজপথ, বদলে দিয়েছে একটি ছাত্রের জীবন, আর আমাদের সামনে এনে দিয়েছে নতুন এক প্রশ্ন—আন্দোলন কি এখনো স্বতঃস্ফূর্ত, নাকি সেখানে ঢুকে পড়েছে ভিন্ন শক্তি?



















