দীর্ঘ দেড় মাসের আন্দোলন, প্রশাসনিক অচলাবস্থা, আর সর্বশেষ কমপ্লিট শাটডাউনের পর অবশেষে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যৌক্তিক সংস্কার ও চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে সোমবার (৩০ জুন) সকালে কাজে যোগ দেন। সকাল ৯টা থেকেই রাজস্ব দপ্তরগুলোতে শুরু হয় পুরোদমে কাজ।
এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান নিশ্চিত করেছেন—সকাল থেকেই সব দপ্তরে কাজ শুরু হয়েছে। সব কাস্টমস হাউজ, ভ্যাট ও কর অফিসে উপস্থিতি শতভাগ। আজ অর্থবছরের শেষ দিন, তাই রেভিনিউ সংগ্রহে বড় ড্রাইভ চলছে।
দীর্ঘ শাটডাউনে প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ভোমরা, আখাউড়া, বুড়িমারী, সোনামসজিদসহ স্থলবন্দরগুলোতে শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে সোমবার থেকে সব বন্দরে ফের চালু হয়েছে কার্যক্রম। কর্মীরা ফিরে গেছেন ডেস্কে, শুরু হয়েছে ফাইল প্রসেসিং, কন্টেইনার ক্লিয়ারেন্স।
তবে সবকিছুর মাঝেও একটা অজানা চাপ বিরাজ করছে এনবিআরের ভিতর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন,কাজে ফিরলেও সবাই জানে, সরকার কঠোর। বদলি আতঙ্ক এখনো রয়ে গেছে।
গত ১২ মে সরকার "এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ" বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ – রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ জারি করে। মূল উদ্দেশ্য ছিল নীতি নির্ধারণ ও কর আদায় কাজকে পৃথক করা। এখানেই মূলত কর্মকর্তাদের আপত্তি শুরু।
তাদের দাবি— রাজস্ব সংশ্লিষ্ট পদগুলোতে রাজস্ব ক্যাডার থেকেই নিয়োগ দিতে হবে, যাতে নন-ট্যাক্স পেশাদার প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য না হয়। এই দাবিকে ঘিরেই গড়ে ওঠে "এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ"। শুরু হয় প্রতিবাদ, কর্মবিরতি, এবং শেষে পূর্ণ শাটডাউন।
বিশেষ করে গত শনিবার ও রোববারের কর্মসূচিতে চূড়ান্ত অচলাবস্থা দেখা দেয়। স্থবির হয়ে পড়ে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যবসায়ীরা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা মধ্যস্থতায় এগিয়ে আসেন। রোববার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক হয় ব্যবসায়ীদের। পরে এনবিআরের আন্দোলনরত নেতাদের সঙ্গেও দীর্ঘ আলোচনা চলে। রাতে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা আসে— আন্দোলন প্রত্যাহার।
আন্দোলনের মাঝে সরকার বেশ কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়:
-
এনবিআরের চাকরি “অত্যাবশ্যকীয় সেবা” হিসেবে ঘোষণা করা হয়
-
৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়
-
বদলির হুমকি ও প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের বার্তা স্পষ্ট করে সরকার
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা আপাতত পিছু হটে।
কাজে ফিরে এলেও এনবিআরের পরিবেশ পুরোপুরি স্বাভাবিক বলা যাচ্ছে না।
বহু কর্মকর্তা বলছেন,আমরা আন্দোলনের মঞ্চ থেকে নেমেছি ঠিকই, কিন্তু মন থেকে আন্দোলন শেষ হয়নি।
বিশেষত এনবিআরের শীর্ষ পদে "বিশেষ নিয়োগ" নিয়ে আপত্তি রয়ে গেছে। চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের অপসারণ এখনো অনেকের চাওয়া। তবে আপাতত সব পক্ষ সমঝোতার পথেই হাঁটছে।
একদিকে আন্দোলনের অবসান এনেছে প্রশাসনিক স্বস্তি, অন্যদিকে পর্দার আড়ালে চাপা অসন্তোষ স্পষ্ট। এনবিআরের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ— রাজস্ব সংগ্রহে গতি আনা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।