রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বর্তমানে এক অস্বাভাবিক অবরুদ্ধ পরিস্থিতির মুখে। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে এনবিআরের সদর দফতরে প্রবেশ ও বাহিরের পথে চলছে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে কিছু না বললেও বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কার্যত কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি — এমনকি সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষও নয়।
বৃহস্পতিবারের অবস্থান ও কলমবিরতি কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনবিআরের ভবনে থাকা কর্মকর্তারাও কাজ বন্ধ রেখেছেন। আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের অবস্থান ও দাবি তুলে ধরলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভেতরে প্রবেশে ‘অলিখিত নিষেধাজ্ঞা’ কার্যকর করে একটি চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর ফলে রাজস্ব আদায়ের কাজ, ফাইল প্রসেসিং, করদাতাদের সেবা— সবই অচল অবস্থায় রয়েছে।
এর আগের দিন, বুধবার (২৫ জুন), এনবিআর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা জানান, আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণ আর প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পড়তে চান না। বরং, এখন সময় দাবি আদায়ের। সেই লক্ষ্যে তারা ২৮ জুন শনিবার থেকে শুরু করতে চলেছেন ‘লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি।
২৮ জুনের শাটডাউনের পাশাপাশি ঘোষণা এসেছে ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিরও। দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে রাজস্ব খাতের হাজারো কর্মকর্তা-কর্মচারী একযোগে রাজধানীমুখী হবেন। উদ্দেশ্য, এনবিআরের সামনে এক বিশাল উপস্থিতি দেখিয়ে নিজেদের দাবিকে চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। ধারণা করা হচ্ছে, এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া একেবারেই অচল হয়ে পড়বে।
রাজস্ব খাতের কর্মচারীরা দাবি তুলেছেন—
-
চাকরি জাতীয়করণ
-
বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস
-
কাজের নিরাপত্তা ও নির্ধারিত সময় অনুযায়ী পদোন্নতি
-
দুর্নীতি ও বৈষম্যের অবসান
তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত এসব বিষয় নিয়ে বারবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই তারা এই কঠোর কর্মসূচির পথে নেমেছেন।
এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে তেমন কিছু বলেননি। তবে আভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের প্রভাব ও শাটডাউনের আশঙ্কায় প্রশাসনিকভাবে বিকল্প পরিকল্পনা নেওয়ার আলোচনা চলছে। যদিও আন্দোলনকারীদের দাবি, এসব ‘পলিসি চালাকি’ এখন আর চলবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এই অবরুদ্ধ পরিস্থিতি ও আন্দোলন যত দীর্ঘ হবে, তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থা এবং সাধারণ করদাতারা।
২৮ জুনের ‘লাগাতার শাটডাউন’ কি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করবে, না কি সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে সমস্যার সমাধান করবে — এখন সেদিকেই তাকিয়ে দেশের অর্থনীতি, করদাতা এবং সাধারণ মানুষ।