সম্প্রতি উত্তরা এলাকায় নির্বাচনী মামলা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার ওপর অমানবিকভাবে হামলার ঘটনাটি সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ পুলিশের পক্ষ থেকে পাওয়া গেছে। তবে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, তাকে ফাঁসানোর জন্য ‘AI’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ভিডিও বানানো হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কথিত ছাত্র-জনতা নুরুল হুদার উত্তরার বাসায় পৌঁছে তাকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করে। হামলাকারীরা ডিম ছুঁড়ে মারার পাশাপাশি তাকে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা অবস্থায় নিচে নামিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ প্রচারের মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে পুলিশের কিছু সদস্যও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে দেখা যায়। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজে সাদা পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তি সাবেক সিইসিকে জুতা দিয়ে মারতে দেখা যায়, যিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের মুজাম্মেল হক ঢালী বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
তবে মুজাম্মেল ঢালী এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি ওই সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না এবং ‘AI’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ভুয়া ভিডিও তৈরি করে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবক দল ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যা কাল প্রতিবেদন দেবে এবং দলের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা, যিনি তদন্তে নিযুক্ত, বলেন, এই ঘটনার পেছনে স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেনের সম্পৃক্ততার কথা তারা জানতে পেরেছেন। তবে তদন্ত চলাকালীন পর্যন্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি জানান, পরিস্থিতি অনুসারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেন দাবি করেন, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না এবং গুলশানে ছিলেন। তিনি বলেন, “হামলার খবর পেয়ে আমি আমাদের নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে অনুরোধ করেছি। তবে উত্তেজিত জনতা সাবেক সিইসিকে আটক করার চেষ্টা করছিল।”
উত্তরা পুলিশের উপকমিশনার মহিদুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি, তবে ঘটনার বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, “একটি জিডি হয়েছে এবং ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।”
এ ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে এবং জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, দলের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকেও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
নুরুল হুদার ওপর হামলার এই ঘটনাটি দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক সংহতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই মনে করছেন, আইনের শাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে এবং রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আগামী দিনে স্বেচ্ছাসেবক দলের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং পুলিশের তদন্তের অগ্রগতি এই ঘটনায় নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।