নৌ-আকাশে ভারতীয় আধিপত্য! ৬৩ হাজার কোটি টাকায় রাফায়েল এম যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারতের নৌবাহিনীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় যুদ্ধবিমান আধুনিকীকরণ শুরু হচ্ছে। ফ্রান্স থেকে ২৬টি রাফায়েল এম বিমান কিনছে ভারত, যা চীনের বিরুদ্ধে সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী করবে।..

নৌবাহিনীর শক্তি বাড়াতে ৬৩ হাজার কোটি টাকার রাফায়েল চুক্তি: আধুনিক যুদ্ধবিমান যুগে পা দিল ভারত

নয়াদিল্লি, ৯ এপ্রিল:
নৌবাহিনীর সামরিক শক্তি ও আধুনিকায়নে ঐতিহাসিক এক পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত। দেশের সমুদ্র নিরাপত্তা ও কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে ফ্রান্স থেকে ২৬টি অত্যাধুনিক রাফায়েল এম (মেরিন) যুদ্ধবিমান কিনতে যাচ্ছে ভারত। সরকার-টু-সরকার (G2G) চুক্তির আওতায় সম্পন্ন হতে যাওয়া এই ডিলের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬৩ হাজার কোটি রুপি

এটি হবে ভারতীয় নৌবাহিনীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় যুদ্ধবিমান আধুনিকীকরণ প্রকল্প। এ চুক্তির মাধ্যমে ভারত চীনের সমুদ্র উপকূলীয় ও মহাসাগরীয় প্রভাব মোকাবেলায় আরও প্রস্তুত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


 ফরাসি প্রযুক্তির রাফায়েল এম – নৌবাহিনীর নতুন ভরসা

রাফায়েল এম বিমানটি বিশ্বের অন্যতম সেরা নৌবিমান হিসেবে বিবেচিত। এতে রয়েছে শক্তিশালী ল্যান্ডিং গিয়ার, ফোল্ডিং উইংস ও উন্নত আন্ডারকারেজ, যা এটিকে বিমানবাহী রণতরীতে ওঠানামার জন্য একেবারেই উপযোগী করে তোলে।

এই বিমানগুলো ভারতীয় নৌবাহিনীর নিজস্ব রণতরী আইএনএস বিক্রান্তে মোতায়েন করা হবে। এর ফলে নৌসীমায় নজরদারি, আকাশ প্রতিরক্ষা এবং প্রতিপক্ষকে চমকে দেওয়ার ক্ষমতা বহুগুণে বাড়বে।

প্রথম পর্যায়ে বিমানগুলো আসতে শুরু করবে ২০২৭ সাল নাগাদ এবং ২০৩১ সালের মধ্যে পুরো বহর ভারতের হাতে এসে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


 চুক্তির আওতায় থাকবে আরও অনেক কিছু

এই বিশাল প্রকল্পে শুধু বিমান কেনাই নয়, বরং রক্ষণাবেক্ষণ, সরবরাহ সহায়তা, চালকদের প্রশিক্ষণ এবং ‘অফসেট বাধ্যবাধকতা’র আওতায় দেশীয় উৎপাদনের ব্যবস্থাও থাকবে। অর্থাৎ, ভারতীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকেও যুক্ত করা হবে এই প্রকল্পে।

চুক্তি অনুযায়ী,

  • ২২টি রাফায়েল এম হবে সিঙ্গেল-সিটার

  • ৪টি হবে টুইন-সিটার

  • সবগুলোই মেরিন সংস্করণের জন্য উন্নত করা


 চীনের বিরুদ্ধে কৌশলগত অবস্থান

ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ভারতকে উদ্বেগে ফেলেছে। সেই কারণেই নৌবাহিনীর কৌশলগত ক্ষমতা বাড়ানোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ ত্রিপাঠী বলেন,

“আমরা আমাদের কৌশল এমনভাবে বদলাচ্ছি, যাতে সীমালঙ্ঘন প্রতিহত করা যায় এবং যেকোনো হুমকির মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকা যায়।”

এই যুদ্ধবিমানগুলো শুধু প্রতিরক্ষাতেই নয়, বরং ভারতের সামুদ্রিক দখলদারি, নজরদারি ও কৌশলগত প্রভাব বিস্তারে কার্যকর হবে।


 ‘বাডি-বাডি’ রিফুয়েলিং প্রযুক্তিতে নতুন মাত্রা

রাফায়েল এম যুদ্ধবিমানগুলোর অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য হলো ‘বাডি-বাডি’ এরিয়াল রিফুয়েলিং ক্ষমতা, যার মাধ্যমে এক বিমান অন্য বিমানকে আকাশেই জ্বালানি সরবরাহ করতে পারবে। এটি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময় ধরে মিশন চালিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থা।


 দেশীয় প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয়

বর্তমানে ভারতীয় নৌবাহিনী রাশিয়ান মিগ-২৯কে ব্যবহার করছে, যা আইএনএস বিক্রমাদিত্য থেকে পরিচালিত হয়। রাফায়েল এম আসার পর এই দুটি বাহিনী একসঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।

এছাড়া, দেশীয়ভাবে তৈরি অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্র্যাফট (AMCA) এর নৌবাহিনী উপযোগী সংস্করণ যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে, যা ভবিষ্যতে ভারতকে আত্মনির্ভরতার পথে এগিয়ে নেবে।


🇮🇳 ভারতীয় আকাশে আগে থেকেই রাফায়েলের দাপট

উল্লেখ্য, ভারতের বিমান বাহিনী ইতোমধ্যেই ফ্রান্স থেকে ৩৬টি রাফায়েল 'সি' ভ্যারিয়েন্ট গ্রহণ করেছে, যেগুলো উত্তর ভারতের দুটি ঘাঁটি থেকে পরিচালিত হয়।

এখন এই নতুন চুক্তির মাধ্যমে ভারত নৌবাহিনীর ক্ষেত্রেও সেই আধুনিকতা নিয়ে আসছে।


রাফায়েল এম যুদ্ধবিমান কেনার এই সিদ্ধান্ত ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি শুধুমাত্র সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধিই নয়, বরং কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের এক সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ। চীনের মতো প্রতিপক্ষের সামনে শক্ত অবস্থান নিতে এই প্রকল্প এক বিশাল হাতিয়ার হয়ে উঠবে।

Keine Kommentare gefunden