নির্বাচনের দিনক্ষণ অনিশ্চিত: সরকার এখনো স্পষ্ট বার্তা দেয়নি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
দেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নিয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো ঘোষণা দেয়নি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিভিন্ন সময় সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের দেওয়া বিভ্রান্তিকর বক্তব্যে জনমনে সংশয় বাড়ছে।..

দেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দিষ্ট ঘোষণা দেয়নি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বরং বিভিন্ন সময় সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি, বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন, যা জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি করেছে।

সম্প্রতি, ১৪ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’-এর ব্যাপারে একমত হয়, তবে নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করা হয়, তাহলে নির্বাচন ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে এই মন্তব্য করেন। এই বক্তব্যের পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কারণ, গত কয়েক মাসে প্রধান উপদেষ্টা ও সরকারের অন্য কর্মকর্তারা ডিসেম্বর, মার্চ এবং জুন—এই তিনটি সময়সীমা উল্লেখ করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় দেওয়া বক্তব্যের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে সরকারের মধ্যেই নির্বাচনের সময় নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।

নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা? বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। অন্তর্বর্তী সরকার এখনো পুরোপুরি জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি, যা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য অপরিহার্য।

নাহিদের বক্তব্যের সপ্তাহখানেক পর প্রধান উপদেষ্টা যখন নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্ট বক্তব্য দেন, তখন অনেকেই এই দুটি ঘটনাকে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করেন। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসলে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকার আগে আশ্বস্ত করলেও এখন সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে। বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিচ্ছে।’’

সরকারের দ্বিধাদ্বন্দ্ব গত ১০ মার্চ যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা জানান, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। এর আগে, ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছিলেন। এতে করে জনগণের মনে আরো বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘‘এটি একটি নির্দলীয় সরকার, তাই কোনো দলের মতামত উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। ড. ইউনূস ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে চাইছেন, কিন্তু যদি সম্ভব না হয়, তাহলে তিনি জুনের সময়সীমা রেখে দিচ্ছেন।’’ তবে তিনি সতর্ক করেছেন যে, এই বিলম্ব রাজনৈতিক অঙ্গনে মতানৈক্য বাড়িয়ে তুলতে পারে।

নির্বাচনের ভবিষ্যৎ কী? বিএনপি জোটের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, ‘‘সরকার একটি ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করছে। তারা একদিকে বিএনপির মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে, আবার অন্যদিকে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকেও নাখোশ করতে চাচ্ছে না। এই কারণেই নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বারবার পরিবর্তন আসছে।’’

এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘‘সরকারের বারবার সময় পরিবর্তন করা তাদের পিছু হটার লক্ষণ। তারা বিএনপি ও অন্যান্য দলগুলোর মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করছে, যার ফলে একটি সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হচ্ছে।’’

অপরদিকে, ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘‘নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি না হলে জুনেও নির্বাচন হবে না।’’

সার্বিকভাবে, প্রধান উপদেষ্টার পরপর দেওয়া ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এবং সরকারের দ্বিধাদ্বন্দ্ব জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জনগণের আস্থা ফেরাতে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নির্বাচনের বিষয়ে একটি নির্ভরযোগ্য ও নির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করা উচিত।

No comments found


News Card Generator