close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

নির্বাচনে বাইরের হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের জনগণের কাম্য নয়: জামায়াত আমির..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মতবিনিময় সভায় জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ নয়, দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন বাংলাদেশের জনগণ। শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি না করে সুষ্ঠু, গ্রহণয..

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান দেশের জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “নির্বাচনে কোনোভাবেই বিদেশি হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। এ দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এখানকার মানুষ, কোনো বাইরের শক্তি নয়।”

রোববার (৮ জুন) দুপুরে কুলাউড়া পৌরসভা মিলনায়তনে বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চাই, যেখানে জনগণের রায়ই হবে চূড়ান্ত।”

তিনি আরও বলেন, “দেশে যদি সত্যিকারের সৎ নেতৃত্ব আসে, তাহলে পাঁচ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের দৃশ্যমান পরিবর্তন সম্ভব। শহীদদের রক্তের সঙ্গে কেউ যেন বেইমানি না করে। সেই রক্তের মর্যাদা রক্ষা করাই হবে আমাদের আসল দায়িত্ব।”

ডা. শফিকুর রহমান নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “আমি এই উপজেলার সন্তান। আমার বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা মামলা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। অথচ আমি সেই সময় কোনো সংগঠনের সাথেই যুক্ত ছিলাম না। শুধুমাত্র জামায়াতের নেতৃত্বে আছি বলে বারবার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু কুলাউড়ার মানুষ কখনো সেই অপপ্রচারে সাড়া দেয়নি।”

তিনি বলেন, “আমি কারা সেই ষড়যন্ত্র করেছিল, জানি। কিন্তু আমি প্রতিশোধ নিতে চাই না। সমাজে যদি প্রতিহিংসার চর্চা চলতেই থাকে, তাহলে সেটি মানবিক সমাজ নয়, বরং অসুরের সমাজে রূপ নেবে। আমরা চাই একটা মানবিক, মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ।”

তিনি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতাহীনতার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “যদি দেশের শিক্ষা কারিকুলামকে নৈতিক ভিত্তিতে সাজানো হয়, তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্ম প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠবে। দেশের প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ইট, বালি, পাথরের সাথে জনগণের ঘাম জড়িত। এই উপলব্ধি যদি শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি করা যায়, তাহলে কেউ ঘুষ নেয়ার আগে হাজারবার ভাববে।”

দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট ভাঙার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সঠিক জায়গায় আঘাত দিতে পারলে সব দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট তছনছ হয়ে যাবে। আমাদের বিদ্যমান সম্পদই দেশকে বদলাতে যথেষ্ট, যদি সেটা সদ্ব্যবহার করা যায়।”

দেশীয় সংস্কৃতি ও পারিবারিক ভাঙনের দায়
ডা. শফিকুর রহমান দেশের সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে পারিবারিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। অপসংস্কৃতির প্রভাবে আজ আমাদের সন্তানরা বিপথে যাচ্ছে। এটি রোধ করতে হলে শিক্ষা এবং সংস্কৃতি—দুটো জায়গায়ই নৈতিকতার চর্চা ফিরিয়ে আনতে হবে।”

জনতার টাকায় গড়া রাষ্ট্র, জনতার কাছেই দায়বদ্ধ
তিনি বলেন, “ভিক্ষুক থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ী পর্যন্ত ট্যাক্স দেন। সেই টাকাতেই তৈরি হয় স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট। আমরা যারা শিক্ষিত, তারা সেই সুবিধার ফসল। তাই আমরা জাতির কাছে চিরঋণী। এই দায়বদ্ধতা যদি আমাদের শিক্ষিত সমাজ অনুধাবন করতে পারে, তাহলে তারা দেশের প্রকৃত সম্পদ হয়ে উঠবে।”

উপস্থিত নেতৃবৃন্দের বক্তব্য
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগর আমির মো. ফখরুল ইসলাম, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামির আলী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মৌলভীবাজার জেলার সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, ঢাকা পল্টন থানা আমির শাহীন আহমদ খান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি আজিজ আহমদ কিবরিয়া, পৌর আমির হাফেজ তাজুল ইসলাম প্রমুখ।

এছাড়াও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এডভোকেট ছালিক আহমদ চৌধুরী, আনিসুর রহমান, মনির উদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ মাসুক উদ্দিন, মো. শফিক উদ্দিন, মোহাম্মদ শামসুল হক, এডভোকেট রবিউল ইসলাম, এনামুল ইসলাম, রাজানুর রহিম ইফতেখার, ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন ও উপজেলা সভাপতি আতিকুর রহমান তারেক।


সভায় অংশগ্রহণকারীরা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে একযোগে মত প্রকাশ করেন এবং আগামী দিনে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও নৈতিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

Aucun commentaire trouvé