রাজনীতির একাংশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির ভেতরে তৈরি হওয়া গভীর সংশয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও টকশো উপস্থাপক জিল্লুর রহমান সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ উদ্ধৃত করে বলেছেন, লন্ডনে দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠক শেষে নেতাকর্মীদের মধ্যে আশাবাদ ছিল নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে এবং দল বিজয়ী হবে। কিন্তু সেই আশার আলো ক্রমশ ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
জিল্লুর রহমান বলেন, বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান বর্তমানে জটিল ও বিভ্রান্তিকর। দলের ভেতরে এবং বাইরে থেকে বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক চিত্র সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফল এবং অনুপাতভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের দাবি জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার একটি কৌশল হতে পারে।
তার মতে, বিএনপির অনেক নেতাকর্মী বর্তমান অবস্থা নিয়েই আপোষবশত সন্তুষ্ট। দলের মূল লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া, দেশের মানুষের সেবা করা ও দলকে শক্তিশালী করা না হয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ, ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েছে অনেকেই।
জিল্লুর আরও উল্লেখ করেন, বিএনপির সাবেক রাজনৈতিক মিত্রগণও এখন দলের থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন। জামায়াত, হেফাজত ও ইসলামী আন্দোলনের মতো দলগুলো একটি বিকল্প ইসলামি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলছে, যেখানে বিএনপির অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীন ও ভারতের ভূরাজনৈতিক প্রভাব নিয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন। তার বক্তব্য, চীনের সঙ্গে বিএনপির ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে এবং চীন দলটিকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে এই মুগ্ধতা ভবিষ্যতে দলের কৌশলগত ভুলে পরিণত হতে পারে। বিএনপি অতিমুগ্ধ হয়ে গেলে তারা চীনের পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবে, যা দেশের স্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে। তিনি পরামর্শ দেন, বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করা উচিত।
জিল্লুর রহমানের ভাষ্যে, আওয়ামী লীগের একনায়কতান্ত্রিক শাসন ও উন্নয়নের নামে দুর্নীতি বাংলাদেশের রাজনীতিকে ভেঙে দিয়েছে। অন্যদিকে, বিএনপি একের পর এক ভুলের কারণে তাদের নেতৃত্বের জায়গা হারাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুসের সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হবে না; নির্বাচন ঘোষণা ও কার্যক্রম পিছিয়ে দেওয়া হবে, সংস্কার ও বিচার কার্যকর হবে না। বিপরীতে, বিএনপিও বড় কথা বললেও কাজের কাজ করতে পারবে না।
তার মতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন অপরিহার্য। দ্রুত নির্বাচন না হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো আরও বিপর্যস্ত হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন না হলে, আগামী কয়েক বছর নির্বাচনের সম্ভাবনা খুব কম।
শেষে জিল্লুর বলেন, আওয়ামী লীগ দুর্নীতির দায়ে ভারতে ডুবেছে, আর বিএনপি চীনা মুগ্ধতায় ডুবে বসেছে। বাংলাদেশের রাজনীতির সুস্থ ও গণতান্ত্রিক উন্নয়নের জন্য এসব ভুল থেকে ফিরিয়ে আনা জরুরি।